এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোপে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ১০০ কোটি ডলার জরিমানা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প সরকার। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। অভিযোগ, গত বছর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় ইহুদিবিদ্বেষী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আর এর জন্যই এই জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করেছিল ট্রাম্পের প্রশাসন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল ফান্ডিং তথা রাষ্ট্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জরিমানা দিয়ে সমঝোতা করতে হয়েছে।
এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্রদের ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। যদিও সেই সিদ্ধান্ত আদালতের বাধার মুখে পড়ে। এবার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্যবস্তু করা হলো।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে শনিবার (৯ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের আড়ালে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।
আর এই অভিযোগে ১০০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিমাণ জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে, এটা তার পাঁচ গুণ বেশি। জরিমানা না দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত অনুদান বন্ধ করা হবে বলে হুঁমকি দিয়েছে ট্রাম্প সরকার।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই পরিমাণ অর্থ জরিমানা দিতে হলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ‘ধস’ নামবে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক ইউসিএলএসহ মোট ১০টি ক্যাম্পাস রয়েছে। সব কয়টি ক্যাম্পাসের তত্ত্বাবধান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জেমস মিলিকেন।
তিনি জানান, শুক্রবারই ১০০ কোটি ডলারের জরিমানা দাবির বিষয়ে জানতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই এই নিয়ে পর্যালোচনা করতে শুরু করেছেন তারা।
মিলিকেন বলেন, ‘একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা করদাতাদের অর্থের রক্ষক। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা দিতে হলে আমাদের দেশের সেরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা একেবারে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়বে। তা আমাদের শিক্ষার্থীসহ ক্যালিফোর্নিয়াবাসীর জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ প্রযুক্তি ও জীবন সুরক্ষাদায়ী চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য ইউসিএলএ ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের ওপর নির্ভর করেন। এই কাজ সেই দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখে। এখানেই আমেরিকার অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার ও নোবেলজয়ী আছেন।
ট্রাম্পের প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসম। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন বোর্ডের একজন সদস্য। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। নিউসমের অভিযোগ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেই দেশের অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতাকে দমন করার চেষ্টা করছেন।