ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির ছায়া

বিপন্ন আমেরিকান সংস্কৃতি ও মানবিকতা!

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২০:০৩

যুক্তরাষ্ট্রের রাজপথজুড়ে উৎসব-আনন্দে মেতে ওঠার কথা ছিল। গরমের ছুটিতে পার্কে, মিউজিয়ামে, সড়কে—সেখানেই চলত প্রাণের মিলনমেলা। কিন্তু আজ, একই আমেরিকায়—ভয়ের আবহে ম্লান হয়ে পড়েছে বহু রঙিন আয়োজন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন সংক্রান্ত কঠোর নীতির ফলে গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক নিঃশব্দ আতঙ্ক। যেটি শুধু অভিবাসীদের নয়, প্রবাসজীবনের মানবিক বুনোটকেও ছিন্ন করে দিচ্ছে ক্রমশ।
ট্রাম্প-সমর্থিত অভিবাসন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট সংস্থা (আইস)-এর সদ্য ঘোষিত নীতি অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই অভিযান থেমে নেই শুধু অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে—ভুক্তভোগী হচ্ছেন স্থায়ী বাসিন্দা এমনকি অনেক মার্কিন নাগরিকও। ফলত, শিকাগো থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস, ম্যাসাচুসেটস থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত—সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উৎসবগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অথবা আড়াল নিচ্ছে আতঙ্কে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ব্লক পার্টি’, ফিলাডেলফিয়ার ‘কার্নাভাল দে পুয়েবলা’, কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘ফেস্টিভাল চাপিন’—বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এইসব জনপ্রিয় আয়োজন একে একে স্থগিত কিংবা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আয়োজকেরা বলছেন, “এটা উৎসবের সময় নয়, বরং একে অপরকে আগলে রাখার সময়।”
মঞ্চ আর মিউজিকের দুনিয়াও এই সংকটে প্রভাবিত। বিশ্বখ্যাত শিল্পী ব্যাড বানি এবারের মার্কিন সফরে মূল ভূখণ্ড বাদ রেখেছেন। যদিও প্রকাশ্যে তিনি এর ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তবে অনেকেই মনে করছেন, ভক্তদের আইস-এর হয়রানি থেকে রক্ষা করতেই এমন সিদ্ধান্ত।
সঙ্গীতদল ‘লা ভারদাদ’-এর নেতা গ্যাব্রিয়েল গঞ্জালেস বলেন, “মানুষ যেন আবার কোনো মহামারির ভেতর পড়েছে। আমরা চেষ্টা করি সংগীত দিয়ে সেই ভয় কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দিতে।”
কেবল উন্মুক্ত উৎসব নয়, ভয় ছড়িয়ে পড়েছে গির্জার মত ধর্মীয় স্থানেও। সান বার্নার্ডিনোর বিশপ আলবার্তো রোজাস অনুগামীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চার্চে না আসার পরামর্শ দিয়েছেন। এটা যে নিছক আতঙ্ক নয়, তার প্রমাণ মিলেছে শিকাগোর বারিও আর্টস ফেস্টিভ্যালে—আইসের সদস্যরা ওয়ারেন্ট বা পরিচয়পত্র ছাড়াই প্রবেশ করে ‘পরিদর্শনের’ নামে হুমকি সৃষ্টি করেন।
তবুও আয়োজকেরা দমে যাননি। আইনজীবী, স্বেচ্ছাসেবক, নিরাপত্তা টিম নিয়ে তাঁরা উল্টো এক ‘মডেল’ স্থাপন করেন যেখানে ভয়কে জয় করে সাফল্য আসে। মিউজিয়ামের পরিচালক ভেরোনিকা অকাসিও বলেন, “আমরা দেখিয়ে দিয়েছি—ভয় নয়, ভালোবাসা জয়ী হয়।”
ইলিনয়ের কংগ্রেস সদস্য ডেলিয়া রামিরেজ স্পষ্টভাবে বলেন, “যখন ফেডারেল সরকার ক্ষতি করতে চায়, তখন আমাদের একে অন্যকে আগলে রাখতে হবে।” শুধু রাজনীতিক নয়, সাধারণ মানুষও আজ দায়িত্বশীল হয়ে উঠছে। কেউ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন, কেউ আইনি সহায়তায় এগিয়ে আসছেন, কেউ বা কেবল উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নিঃশব্দে।
কলোম্বিয়ার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কের কুইন্সে আয়োজিত উৎসবেও ছিল বাড়তি সতর্কতা। একটি মাত্র প্রবেশপথ, অভিবাসন আইনজীবী, ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে প্রবেশে নিষেধ—সবই ছিল সুচিন্তিত প্রস্তুতির অংশ। তারপরও মানুষ এসেছে দলে দলে—হাজারো মুখে একটাই বার্তা: “ভিভা কলোম্বিয়া!” জার্সি পরে নেচেছে তরুণেরা, হুইলচেয়ারে বসেও তাল মেলাচ্ছেন প্রবীণেরা। আতঙ্কের মধ্যেও মানুষ উৎসব করতে ভুলে যায়নি।
৪ঠা জুলাই ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ পাশের মাধ্যমে আইস-এর ক্ষমতা প্রায় সেনাবাহিনীর সমতুল্য করে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে, সমাজকল্যাণমূলক খাতের বাজেট কেটে সেখানে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ডার প্রধান টম হোম্যান ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন—‘স্যান্কচুয়ারি’ শহরগুলোতে আইস-এর এজেন্টে সয়লাব করে দেওয়া হবে।