গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়ে ‘ধারণা নেই’ ট্রাম্পের

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১১ মে ২০২৫, ১৩:৫৯

বাইডেনের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় চার মাস পর আশপাশ ও প্রশাসনকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায়ই ওয়াকিবহাল থাকেন না ট্রাম্প। বেশ কিছু উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। অ্যামেরিকার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘জানার সীমাবদ্ধতাকে’ নিজের প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প। তার অভিযোগ ছিল, আশপাশে কী হচ্ছে, তা নিয়ে ধারণা নেই বাইডেনের।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টকে খোঁচা দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, বাইডেন এমন এক ‘পাত্র’, যাকে সামনে রেখে অন্যরা মূলত দেশ চালাচ্ছে।
ট্রাম্প ২০২৪ সালের শুরুর দিকে বলেন, কী ঘটছে, তা নিয়ে কোনো ধারণা নেই বাইডেনের। এর আগে ২০২২ সালে ট্রাম্প বলেন, কী করছেন, কী বলছেন বা কোথায় আছেন, সে বিষয়ে ধারণা নেই বাইডেনের। এটা বাদ দিলে তিনি চমৎকার কাজ করছেন।
বাস্তবতা হলো বাইডেনের কাছ থেকে দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় চার মাস পর আশপাশ ও প্রশাসনকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায়ই ওয়াকিবহাল থাকেন না ট্রাম্প। বেশ কিছু উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
সাম্প্রতিক উদাহরণ
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানান, সার্জন জেনারেল ক্যাসি মিন্সকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দৃশ্যত কোনো ভূমিকা নেই তার। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি তাকে চিনি না।’ ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি পদে এড মার্টিনকে ট্রাম্পের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন রিপাবলিকান বিরোধিতা করেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বুধবার ট্রাম্প জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
এর আগে রবিবারও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে নিজের অজ্ঞতার কথা জানান ট্রাম্প। ওই দিন নাইন-ইলাভেনের সময় প্রথম দিককার সাড়াদাতাদের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিতে কর্মী ছাঁটাই নিয়ে জানতে চাওয়া হয় ট্রাম্পের কাছে। উত্তরে ট্রাম্প জানান, তিনি এ বিষয়ে অবগত নন।
পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক বিষয়
পররাষ্ট্রনীতি ও নিজের চারপাশের সামরিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায়ই ধারণা না থাকার কথা জানান ট্রাম্প। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা আছে।
লিথুয়ানিয়ায় প্রশিক্ষণ মহড়ার সময় গত ২৫ মার্চ নিখোঁজ হন চারজন অ্যামেরিকান সেনা। ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট ২৬ মার্চ বিকেলে ইঙ্গিত দেন, সেনাদের হত্যা করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে সেনাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। সে সময় কিছুক্ষণ থেমে প্রেসিডেন্ট জানান, সেনাদের পরিস্থিতির বিষয়ে তাকে ব্রিফ করা হয়নি।
এর আগে ২৪ মার্চ দুপুরের দিকে দ্য আটলান্টিক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করে। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, একটি অ্যাপে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আলোচনায় তাদের এক সাংবাদিককে যুক্ত করা হয়েছে।
এর দুই ঘণ্টার বেশি সময় পর সে বিষয়ে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
রয়টার্স এ সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, জানুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার চালান আটকে দেওয়ার আদেশ দেন ডিফেন্স সেক্রেটারি পিট হেগসেথ। যদিও এ ধরনের কোনো আদেশ দেননি ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট বিষয়টি জানতেন না বলেও খবর পাওয়া যায়।
অভিবাসন ও বিতাড়ন
অভিবাসীদের ওপর নিজ প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা এবং বিতাড়ন চেষ্টার বড় ধরনের বিষয়ে প্রায়ই নিজের অজ্ঞতার কথা জানান ট্রাম্প।
গত বুধবার অভিবাসীদের লিবিয়ায় পাঠানো নিয়ে প্রশাসনের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ট্রাম্পের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টকে জিজ্ঞাসা করতে হবে আপনার।’ যদিও পরিকল্পনার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় মাত্র এক দিন আগে। গত ২২ এপ্রিল সাক্ষাৎকারের সময় ট্রাম্পকে টাফটস ইউনিভার্সিটির তুর্কি ছাত্রী রুমেইসা ওজতুর্ককে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করার বিষয়ে জানতে চায় টাইম ম্যাগাজিন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই।’
সাক্ষাৎকারের প্রায় এক মাস আগে রুমেইসাকে গ্রেপ্তার করেন মাস্ক পরা এজেন্টরা। গ্রেপ্তারের বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পাশাপাশি রুমেইসার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকায় তার মামলাটি অন্যতম বিতর্কিত বিষয় ছিল। গত শুক্রবার ফেডারেল এক বিচারক রুমেইসাকে কারামুক্তির আদেশ দেন।
অভিবাসীদের বিতাড়ন সংক্রান্ত আলোচিত বিষয়েও ধারণা না থাকার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। এল স্যালভাদরে কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার বহুল আলোচিত বিতাড়ন নিয়ে ট্রাম্প বলেন, তার আইনজীবীরা ভুলক্রমে বিতাড়িত গার্সিয়াকে অ্যামেরিকায় ফেরত আনার চেষ্টা ব্যাহত করছেন। যদিও আদালত এরই মধ্যে গার্সিয়াকে ফেরত আনতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে মার্চে ট্রাম্প দাবি করেন, অভিবাসীদের এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের অধীনে বিতাড়নের ঘোষণাপত্রে তিনি সই করেননি। যদিও তার স্বাক্ষর রয়েছে এতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি জানি না কখন এতে সই করা হয়েছে। কারণ আমি এতে সই করিনি।’