নিউইয়র্ক রাজ্যের অভিভাবকরা চলতি বছরেই পাবেন সরকার ঘোষিত ইনফ্লেশন রিফান্ড চেক। পাশাপাশি ২০২৬ সাল থেকে প্রযোজ্য নতুন শিশু কর ছাড়ে আসছে বড় পরিবর্তন। এই দুটি উদ্যোগ রাজ্যের লাখো পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে গভর্নর ক্যাথি হোকুল এ পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। যা রাজ্যের অতিরিক্ত বিক্রয় কর রাজস্বের একটি অংশ জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। গত ৯ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় নিউইয়র্ক রাজ্য প্রশাসন।
ইনফ্লেশন রিফান্ড চেক: কে কত পাবেন?
নিউইয়র্কের প্রায় ৮ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দা ২০২৫ সালের মধ্যে পেতে যাচ্ছেন এককালীন ‘ইনফ্লেশন রিফান্ড’ চেক। গভর্নর ক্যাথি হোকুল ঘোষিত এই পরিকল্পনার আওতায় রাজ্যের অতিরিক্ত কর রাজস্ব থেকে ২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে এই সহায়তা বিতরণ করা হবে। করোনাপরবর্তী সময়ে মূল্যস্ফীতির কারণে রাজ্যে ভোক্তা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ও তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বাড়তি আয়ের একটি অংশ জনগণের মধ্যে ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই রিফান্ড চেকের পরিমাণ নির্ভর করবে করদাতার ২০২৩ সালের আয় এবং ফাইলিং স্ট্যাটাসের ওপর। এককভাবে কর জমা দেওয়া ব্যক্তিদের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ ডলার পর্যন্ত রিফান্ড পাওয়া যাবে। তাদের বার্ষিক আয় যদি ৭৫ হাজার ডলার বা তার কম হয় তাহলে তারা ২০০ ডলার পাবেন। আর যদি ৭৫ হাজার ডলার থেকে বেশি এবং ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের মধ্যে হয় তাহলে পাবেন ১৫০ ডলার। একইভাবে, যৌথভাবে কর জমা দিলে যাদের বার্ষিক আয় ১ লাখ ৫০ হাজার বা তার কম তারা পাবেন ৪০০ ডলার। আর আয় যদি ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি এবং ৩ লাখ ডলারের মধ্যে হয় তাহলে পাবেন ৩০০ ডলার রিফান্ড।
এছাড়া হেড অব হাউজহোল্ড এবং বিবাহিত আলাদা ফাইলারদের জন্যও একই আয়ের সীমা অনুসারে যথাক্রমে ২০০ ডলার এবং ১৫০ ডলার রিফান্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। যোগ্য বিধবা বা বিধবারা যৌথ ফাইলারদের মতোই সর্বোচ্চ ৪০০ ডলার পর্যন্ত রিফান্ড পাবেন।
রিফান্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই, বরং নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ফাইন্যান্স ধাপে ধাপে এই চেকগুলো পাঠাতে শুরু করবে। তবে এই অর্থ সহায়তা পেতে হলে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। ২০২৩ সালে করদাতাকে অবশ্যই নিউইয়র্কের পূর্ণকালীন বাসিন্দা হতে হবে এবং সেই বছরের রাজ্য ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। আয় নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে এবং করদাতা যেন অন্য কারো ট্যাক্স রিটার্নে ‘ডিপেন্ডেন্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত না থাকেন–সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। যারা এই রিফান্ডের জন্য যোগ্য, তারা শিগগিরই ডাকযোগে এই চেক পাবেন।
দ্বিগুণ হচ্ছে চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট
নিউইয়র্কের শিশুদের জন্য আগামী বছর থেকে কর ছাড়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। ২০২৬ সাল থেকে নিউইয়র্ক রাজ্যে চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট (শিশু কর ছাড়) বাড়ানো হবে। যার ফলে পরিবারগুলো প্রতি শিশুর জন্য আরও বেশি আর্থিক সহায়তা পাবে। গভর্নর ক্যাথি হোকুল এই পরিবর্তনটি ঘোষণা করেছেন। যা রাজ্যের শিশুদের দারিদ্র্য হ্রাস এবং পারিবারিক ব্যয় সামাল দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে চার বছরের কম বয়সী প্রতিটি সন্তানের জন্য পরিবারগুলো বছরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ডলার করে কর ছাড় পাবে, যা বর্তমানে গড়ে ৪৭২ ডলার। আর ৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই কর ছাড় হবে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার পর্যন্ত। বর্তমান গড় ছাড়ের তুলনায় এটি একটি বড় অঙ্কের বৃদ্ধি এবং অনেক পরিবারের জন্য এটি শিক্ষাব্যয়, খাদ্য, পোশাক ও শিশুসেবা খরচ মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিটের যোগ্যতা শর্ত আগের মতোই থাকবে। শিশু অবশ্যই ১৭ বছরের নিচে হতে হবে, বৈধ সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর থাকতে হবে, বছরে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অভিভাবকের সঙ্গে বসবাস করতে হবে এবং তাকে সন্তানের মতো বা যোগ্য আত্মীয় হিসেবে গণ্য হতে হবে।
শিক্ষা ও যত্ন খাতে বড় ধরনের বরাদ্দ
শিশুদের কল্যাণ এবং পারিবারিক সহায়তা নিশ্চিত করতে নিউইয়র্ক রাজ্য সরকার শুধু করছাড় বা নগদ সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে গভর্নর ক্যাথি হোকুল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। যার লক্ষ্য হলো পরিবার ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সমর্থনমূলক পরিবেশ তৈরি করা।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিশুদের যত্ন ব্যবস্থায় বরাদ্দ করা হয়েছে ২.২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির দশ হাজারেরও বেশি পরিবারের জন্য চাইল্ড কেয়ার সাবসিডি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে। এতে কর্মজীবী বাবা-মা ও অভিভাবকরা শিশুদের যত্ন নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন, যা অর্থনৈতিকভাবে তাদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনে সহায়তা করবে।
শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিতে রাজ্যজুড়ে প্রত্যেক কেজি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ফ্রি স্কুল ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪০ মিলিয়ন ডলার। এতে বছরে গড়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রায় ১,৬০০ ডলার ব্যয় সাশ্রয় হবে। এই কর্মসূচি শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন এবং শিশুদের স্বাস্থ্যকর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।
এছাড়া স্কুলে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ডিভাইস ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে রাজ্যজুড়ে 'ডিস্ট্রাকশন-ফ্রি স্কুল' নীতি চালু করা হয়েছে। এই নীতির বাস্তবায়নে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৩.৫ মিলিয়ন ডলার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরের স্মার্টফোন নিষিদ্ধকরণ উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনা এবং শ্রেণিকক্ষে শেখার পরিবেশ আরও উন্নত করা।
এই বহুমুখী উদ্যোগগুলো নিউইয়র্ক রাজ্যের শিশু, অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য একটি শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে বলে মনে করছে প্রশাসন। এগুলো শুধু বর্তমান প্রজন্মকে নয়, রাজ্যের ভবিষ্যৎ উন্নয়নকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে এমটাই মতামত সংশ্লিষ্টদের।