শর্তসাপেক্ষে মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ মে ২০২৫, ১৪:০৪

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনার অংশ হিসেবে মার্কিন-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গাজায় জীবিত থাকা শেষ মার্কিন জিম্মি। খবর বিবিসির। 
এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময় আসলো, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীকাল ১৩ মে (মঙ্গলবার) মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন। হামাস জানিয়েছে, এই পদক্ষেপটি মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ সুগম করতে আরও সহায়ক হবে। এর আগে এক জ্যেষ্ঠ হামাস নেতা বিবিসিকে জানান, কাতারে একজন মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে হামাস সরাসরি আলোচনা করছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি তাদেরকে জানিয়েছে।
একজন ফিলিস্তিনি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, এই ঘোষণাটি ট্রাম্পের আগমনের আগে একটি সদিচ্ছার বার্তা।
তিনি জানান, আজ ১২ মে (সোমবার) সকালে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মুক্তির চূড়ান্ত পরিকল্পনা হবে। এতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের বিমান হামলা স্থগিত রাখা হবে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে এডান আলেকজান্ডারের মুক্তির খবর নিশ্চিত করে বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক খবর এবং সদিচ্ছার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
কে এই এডান আলেকজান্ডার?
২১ বছর বয়সী এডান আলেকজান্ডার তেলআবিবে জন্মগ্রহণ করেন, তবে বেড়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। তিনি ইসরায়েলি সীমান্তে এক অভিজাত পদাতিক ইউনিটে কর্মরত অবস্থায় ৭ অক্টোবর হামলার সময় হামাসের হাতে বন্দী হন।
২০২৩ সালের হামাসের হামলায় মোট ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনও গাজায় রয়েছেন এবং প্রায় ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিক এবং তাদের মধ্যে কেবল আলেকজান্ডার জীবিত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রেক্ষাপট
হামাস জানায়, এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার পদক্ষেপটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি অর্জনের অংশ, যার মাধ্যমে গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সহায়তা প্রবেশ করতে পারবে। গাজা ইতোমধ্যেই ৭০ দিন ধরে ইসরায়েলি অবরোধে রয়েছে।
ইসরায়েলি সরকার জানায়, এই পদক্ষেপটি "আমেরিকানদের প্রতি সদিচ্ছা" হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি আরও জিম্মি মুক্তির আলোচনার দ্বার খুলতে পারে। তবে তারা বলেছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও “আগুনের মধ্যেই” তাদের লক্ষ্য পূরণে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপ
ইসরায়েল গাজায় ৭০ দিন ধরে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই নীতি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি বছরে প্রায় ১০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এবং খাদ্যের দাম এক হাজার ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮২৯ জন নিহত হয়েছেন।
এই সময়ে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর এবং হামাসের সদিচ্ছার পদক্ষেপ যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কিছুটা বাড়ালেও ইসরায়েল এখনও যুদ্ধ শেষের কোনও চুক্তিতে সম্মত নয়।