বন্দে আলী মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্মৃতি সংরক্ষণে অবহেলা, ধ্বংসপ্রায় 'কবিকুঞ্জ'

সাহিত্য ডেস্ক
  ২৭ জুন ২০২৫, ২২:৪১

বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নাম, শিশু সাহিত্যের নান্দনিক নির্মাতা এবং কালজয়ী কবিতা 'আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর' ও 'ময়নামতির চর'-এর রচয়িতা কবি বন্দে আলী মিয়ার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন কবি। সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে ১৯৭৯ সালের আজকের দিনে ৭৩ বছর বয়সে রাজশাহীর কাজিরহাটে নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সমাহিত করা হয় পাবনার রাধানগরের নারায়ণপুর এলাকায়।
কবি বন্দে আলী মিয়া ছিলেন একজন বহুমাত্রিক শিল্পস্রষ্টা—একাধারে কবি, গীতিকার, উপন্যাসিক, নাট্যকার, গল্পকার এবং চিত্রশিল্পী। শিশুসাহিত্যে তার বিশেষ অবদান তাকে দিয়েছে অমরতার আসন। তার লেখা এক সময় পাঠ্যবইয়ের অংশ ছিল, যা একাধিক প্রজন্মকে সৌন্দর্য ও ভাবনায় সমৃদ্ধ করেছে।
তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এমন একজন গুণী সাহিত্যিকের স্মৃতি ও কর্ম আজ অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। পাবনার রাধানগরের নারায়ণপুর মহল্লায় কবির নিজ বাড়ি 'কবিকুঞ্জ' ধ্বংসপ্রায়। সংরক্ষণে নেই কোনো সরকারি বা বেসরকারি কার্যকর উদ্যোগ। একইভাবে, কবির সমাধিস্থলটিও রয়েছে অনাদরে—যা পাবনার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক চেতনার জন্যই এক প্রকার দুর্ভাগ্য।
যদিও পাবনাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে পৌরসভার উদ্যোগে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নামকরণ করা হয়েছে 'কবি বন্দে আলী মিয়া বাস টার্মিনাল' নামে। জেলার আটঘরিয়া উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’। তবে এতেই থেমে গেছে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও সংরক্ষণের কার্যক্রম।
কবির মেজো কন্যা আফরোজা বেগম বলেন, 'বাবার মৃত্যুবার্ষিকী যদি সম্মানের সঙ্গে, রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হতো, তবে আমাদের মনে হতো—বাবা এখনও বেঁচে আছেন।'
অন্যদিকে, কবি বন্দে আলী মিয়া স্মরণ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, 'কবি বন্দে আলী মিয়া বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার লেখা একসময় পাঠ্যবইয়ে ছিল। আমরা চাই, তার সাহিত্যকর্ম পুনরায় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক এবং তিনি যে সম্মান প্রাপ্য, তা যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করা হয়।'
বাংলা সাহিত্যের অগ্রদূতদের যথাযথ সম্মান ও সংরক্ষণ শুধু দায়িত্ব নয়—এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মূল্যবান শিক্ষার উৎস। কবি বন্দে আলী মিয়ার মতো গুণীজনের অবদান সংরক্ষণে অবহেলা অব্যাহত থাকলে, সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জাতিস্মৃতিও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়বে।