
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সমাজের সঙ্গে বেশি যুক্ত থাকেন যারা, তাদের বায়োলজিক্যাল বয়স ধীরে বাড়ে এবং শরীরে প্রদাহের মাত্রা কম থাকে।
বয়স ও বয়স্কত্ব গবেষণার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর লুইজি ফেরুচ্চি সম্প্রতি স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলে একটি বক্তৃতা দেন। তার একটি কথা বিশেষভাবে আকর্ষণ করে সেখানে, বয়স ধীর করার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হবে জীবনযাত্রার ধরণ কীভাবে বয়সকে প্রভাবিত করে তা বোঝা।
বয়স প্রক্রিয়া ধীর করতে পারলে আমরা বয়সজনিত অসুস্থতা নিয়ে দীর্ঘ সময় ভোগান্তিতে পড়ব না, বরং শেষ কিছু বছরে মাত্র সেই রোগগুলো অনুভব করব। এর ফলে দীর্ঘকাল সুস্থ থাকা সম্ভব হবে এবং বয়সের সঙ্গে শরীর সতেজ থাকবে।
ফেরুচ্চির বক্তৃতার ঠিক সময়ে একটি নতুন মার্কিন গবেষণা প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে যে, সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রভাবকগুলোর মধ্যে একটি হল আমাদের সামাজিক জীবন। গবেষণায় উঠে এসেছে, অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা আমাদের বয়স বৃদ্ধি ধীর করতে সাহায্য করে।
এর আগে জানা গেছে, যারা সামাজিকভাবে বেশি যুক্ত থাকে, তারা সাধারণত বেশি দীর্ঘায়ু লাভ করে এবং সুস্থ থাকে। তবে এই সংযোগগুলো আমাদের দেহে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা পুরোপুরি জানা ছিল না।
এই নতুন গবেষণায় ২,০০০-এর বেশি প্রাপ্তবয়স্কের সামাজিক সংযোগের দৃঢ়তা এবং ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করা হয়েছে। যেমন—পারিবারিক সম্পর্ক, কমিউনিটি বা ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, মানসিক সহায়তা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়তা।
গবেষকরা একটি সূচক তৈরি করেছেন, যাকে বলা হয়েছে, কিউমুলেটিভ সোশ্যাল অ্যাডভান্টেজ। এটি মূলত প্রতিফলিত করে যে একজন ব্যক্তি কতটা সামাজিকভাবে সংযুক্ত এবং সমর্থিত। আগের অধিকাংশ গবেষণা শুধুমাত্র বিবাহ বা বন্ধুত্বের মতো একক ফ্যাক্টর দেখেছিল।
সিএসএ-কে বয়সের বিভিন্ন পরিমাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিএনএ পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত জীববৈজ্ঞানিক বয়স, দেহে প্রদাহের মাত্রা এবং স্ট্রেস-জনিত হরমোন যেমন কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের কার্যকারিতা।
ফলাফল দেখিয়েছে, যারা সামাজিক কাজে বেশি সংযুক্ত, তাদের বায়োলজিকাল বয়স ধীরে বাড়ে এবং শরীরের প্রদাহ কম থাকে। তবে স্বল্পমেয়াদি স্ট্রেসের সঙ্গে সামাজিক জীবনের সরাসরি কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক দেখা যায়নি। গবেষকরা মনে করছেন, এটি সম্ভবত মাপার ক্ষেত্রে জটিলতার কারণ।
গবেষণার সবশেষে উঠে এসেছে, সামাজিক সংযোগ এবং বয়স বৃদ্ধির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে এতে বিস্ময় হওয়ার কিছু নেই। মানুষ হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক জীব হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রাচীন কালে গ্রুপের সঙ্গে থাকা কেবল সঙ্গ নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একসঙ্গে কাজ করলে খাদ্য সহজ হতো, নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো এবং মানসিক সুস্থতা বজায় থাকতো। তাই আমাদের শরীর সামাজিক সংযোগের সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করার জন্য তৈরি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সামাজিক সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত অবস্থার সাথেও সম্পর্কিত। উচ্চ শিক্ষার স্তর, ভালো আয় বা নির্দিষ্ট জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্য হওয়া ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে ধীরে বয়স এবং কম প্রদাহের মাত্রা প্রদর্শন করে। এটি নির্দেশ করে যে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উভয়ই বয়স বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
এ বিষয়ে দুটি প্রতিক্রিয়া নেওয়া যেতে পারে। প্রথমে, দরিদ্রতা হ্রাস, শিক্ষা ও সুযোগ বৃদ্ধি করার মতো সামাজিক নীতি প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত স্তরে আমরা আমাদের সামাজিক জীবনকে শক্তিশালী করে—সংযুক্ত, সহায়ক এবং সক্রিয় থেকে—ও বয়স ধীর করার সম্ভাবনা বাড়াতে পারি।
২০১৪ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন জাতীয় এজিং ইনস্টিটিউটের ৪০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে ফেরুচ্চি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কারও প্রশ্ন ছিল, পরবর্তী শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র কোনটি হবে? তৎক্ষণাৎ উত্তর এসেছিল, সামাজিক বিজ্ঞান এবং জিনতত্ত্ব। তখন এই ধরনের কোনো গবেষণা প্রোগ্রাম ছিল না, কিন্তু নতুন গবেষণাটি প্রমাণ করছে যে, এই দুটি ক্ষেত্র একত্রিত হয়ে আমাদের শুধু বয়স বৃদ্ধির জন্য প্রকৃতি নয়, বরং কিভাবে ভালোভাবে বয়স কমানো যায় তা বোঝাতে সাহায্য করছে।