
প্রতি বছরের মতো ইমিগ্রেশন অফিসে নিয়মিত হাজিরা দিতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইসের হাতে আটক হয়েছেন বাংলাদেশি এক নারী।
মাসুমা খান গত ৬ অক্টোবর থেকে ক্যালিফোর্নিয়া সিটি কারেকশনাল ফ্যাসিলিটিতে বন্দি।
ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৮ বছর ধরে বসবাসরত ৬৪ বছর বয়সী এ নারী হাঁপানি ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
বন্দি অবস্থায় তিনি ঠিকমতো ওষুধ পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবার।
এমন বাস্তবতায় মাসুমা খানের মুক্তির বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্টেইটের ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতারা।
মেয়ে রিয়া খানের ভাষ্য
মাসুমার মেয়ে রিয়া খান জানান, তার মায়ের বিষয়ে বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি।
‘ক্যালিফোর্নিয়া সিটি ফ্যাসিলিটি যেটা, ওটা মোহাবি ডেজার্টের মাঝখানে। তো ওইখানেই আছে আমার আম্মু। ছয় তারিখের রাত্রে থেকে’, বলেন রিয়া খান।
মাকে আটক কেন্দ্রে বন্দি দেখা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এ নারী।
তিনি বলেন, ‘আমার আম্মুকে এখন মেইন গোল হল ওইখান থেকে বের করা। কারণ উনি হয়েছে সিক্সটি ফোর ইয়ার্স ওল্ড। উনার অনেকগুলো হেলথ ইস্যুজ আছে। তো আর কোনো ক্রিমিনাল হিস্ট্রি নাই। আমি জানি না উনাকে কেন এখানে নিল।
‘কারণ এভরি ইয়ার তো উনি চেকইন করতেছে। তো এমন না যে, সে ফ্লাইট রিস্কে ছিল। এ জন্য আমরা কোনোই বুঝতে পারতেছি না যে, কেন সে ওখানে রাখা হয়েছে।’
গত ৬ অক্টোবর লস অ্যাঞ্জেলেসে আইস কার্যালয়ে চেকইন অ্যাপয়েন্টমেন্টে গিয়ে আটক হন রিয়ার মা মাসুমা খান। নাগরিকত্বের জন্য আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় গত পাঁচ বছর ধরেই নিয়মিতভাবে সেখানে হাজিরা দিয়ে আসছেন তিনি।
আইসের হাতে আটকের বিষয়ে কোনো রকম পূর্ব নোটিশ বা ধারণাই ছিল না মাসুমার।
‘তো ওই দিনও গেল এটা। ফিফথ ইয়ারে গেল। এতদিন কিছু হয় নাই, কিন্তু ওই দিন বলছে, আমরা তোমাদের কাস্টডিতে নিয়ে নিচ্ছি’, বলেন রিয়া।
যেভাবে অ্যামেরিকায় যান মাসুমা
রিয়া জানান, ১৯৯৭ সালে তার শৈশবকালে দাদির সঙ্গে আমেরিকায় বেড়াতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দেখাশোনা করতে তার মা মাসুমা খানও এ দেশে আসেন। পরবর্তী সময়ে মাসুমা খানের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে উদ্যোগী হলে তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়ে এক ব্যক্তির প্রতারণা করেন।
ওই ব্যক্তি অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যান অভিযোগ করে রিয়া বলেন, এর ফলে তার বাবা ইশতিয়াক আহমেদ খান আমেরিকার নাগরিক হলেও মা মাসুমা খানের আবেদনটি ঝুলে যায়।
‘এ জন্য উনি (অর্থ নেওয়া ব্যক্তি) ডিজঅ্যাপিয়ার হয়ে গেছে। তারপরে আর কোনো খবর নাই উনার। তো তারপরে কত বছর ধরে আমার আম্মু অনেক লইয়ারের কাছে গেল, কিন্তু সবাই বলছে যে, না, হেল্প করতে পারব না, কিন্তু যখন আমার আব্বু ফাইনালি ইউএস সিটিজেন হইল, তারপরে উনি পিটিশন করল আমার আম্মুকে ২০১৫-এ’, বলেন রিয়া।
‘তারপর যখন ওরা ইন্টারভিউতে গেল আমার আম্মুর গ্রিন কার্ডের জন্য, তখন ওরা বলল যে, তুমি এই লোককে চিনো? আমার আম্মু ওর আসল নাম হয়তো জানতো না। তারপরে জিজ্ঞেস করছে যে, এটাকে অন্য নাম দিয়ে নুরজাহান নাম ক্রিয়েট করে দিছে বা আমার আম্মুর কাছে পাসপোর্ট, ওগুলা কিছুই ছিল না। তো এজন্য বলল যে, আচ্ছা ডিনাই করি’, যোগ করেন মাসুমার মেয়ে।
সুস্থতা নিয়ে শঙ্কা
মাসুমা খানের মুক্তির জন্য কাজ করছেন তাদের পারিবারিক আইনজীবী, তবে আটক কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সব ওষুধ না পাওয়ায় তার সুস্থতা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাই দ্রুত তার মুক্তি পাওয়া জরুরি বলে জানান মেয়ে রিয়া।
তিনি বলেন, ‘আমার আম্মুর হাই ব্লাড প্রেশার আছে। তো ওষুধ না দেওয়ার জন্য আমার আম্মুর ব্লাড প্রেশার ক্লাইম্ব করতে করতে ১৬৯ ওভার হয়ে গেছিল। তারপরে দেখি যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তার পা ফুলে গেছে; হাঁটতে পারতেছে না।’
সহযোগিতার আশ্বাস আইনপ্রণেতাদের
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসম্যান জুডি চু এবং সিনেটর অ্যাডাম শিফ মাসুমা খানের জামিনের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কংগ্রেসওম্যান চু জানান, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা; আইসের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া না পাওয়ার কথা জানিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে মাসুমা খানের পরিবার।
‘খুবই হার্ট ব্রেকিং। আর আমরা অসহায় ফিল করি এ জন্য যে, আমাদের নিজের মানুষ আমাদের পিছে কেন নাই? আমাদের নিজের গভর্নমেন্ট কেন আমাদের পিছে নাই?’
তথ্য সূত্র: টিবিএন২৪