আটলান্টায় তিন কবিকে নিয়ে কবিতা ও সংস্কৃতির উৎসব

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৫

প্রবাসে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক মনোরম সন্ধ্যায় মিলিত হলো আটলান্টার বাংলা ভাষাভাষী সমাজ। রোববার (৯ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আটলান্টা বেঙ্গলি কমিউনিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি কণ্ঠে কবিতা’ শিরোনামের ব্যতিক্রমী সাহিত্যসম্মিলন। তিন সমকালীন কবি—অংকন বসু, উৎপল দত্ত ও নাহিদ ফারজানাকে ঘিরে এই আয়োজন ছিল পুরোপুরি কবিতাকেন্দ্রিক।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আটলান্টার সুপরিচিত কবি ও আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ চৌধুরী। শুরুতেই তিন কবির কবিতার অংশ আবৃত্তি করে তিনি শ্রোতাদের স্বাগত জানান।
রবীন্দ্রসংগীতে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ক্ষুদে শিল্পী মর্মী বসু পরিবেশন করেন ‘সফল কর হে প্রভু আজি এ সভা’। এরপর বাঁশির সুরে পরিবেশ মাতিয়ে তোলেন স্থানীয় শিল্পী মাহবুব মোর্শেদ আনোয়ার।
প্রথম পর্বে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন নাহিদ ফারজানা। একাধিক কবিতার ছন্দে-অনুভূতিতে তিনি শ্রোতাদের নিয়ে যান ভাষা ও বেদনার গভীরে। এরপর পর্যায়ক্রমে মঞ্চে আসেন অংকন বসু ও উৎপল দত্ত। তিন কবিই তাদের সৃষ্টিশীল যাত্রা, প্রেরণা ও জীবনদর্শনের কথা ভাগ করে নেন দর্শকের সঙ্গে।
উপস্থাপক রাশেদ চৌধুরীর সংলাপভিত্তিক পরিচিতি পর্বে কবিদের সঙ্গে দর্শকের দূরত্ব আরও কমে আসে। গতানুগতিক পরিচিতির বদলে এই আলাপচারিতা অনুষ্ঠানটিকে করে তোলে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়।
টানা দেড় ঘণ্টা ধরে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল খালি কণ্ঠে কবিতা পাঠ—যা প্রবাসী জীবনে এক বিরল অভিজ্ঞতা। উপচে পড়া দর্শক পিনপতন নীরবতায় বসে কিংবা দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন কবিতার এই অনুষ্ঠান। তাঁদের উৎসাহই প্রমাণ করে—প্রবাসেও বাংলা কবিতার আবেদন অটুট।
অনুষ্ঠানে দুই বাংলার সাহিত্যপ্রেমীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। আয়োজকেরা জানান, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি মানুষের এই একাত্মতা প্রবাসী সমাজের শক্তির প্রতীক।
মঞ্চের পাশে সাজানো ছিল তিন কবির গ্রন্থের প্রদর্শনী, যেখানে দর্শকেরা পছন্দের বই সংগ্রহের সুযোগ পান। অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘আলো-প্রদীপ’, সাংস্কৃতিক আলোর প্রতীক হিসেবে।
চা-নাস্তার আড্ডায় শেষ হয় সন্ধ্যার আয়োজন। আড্ডা, কবিতা, সুর আর আন্তরিকতার মিলনে এটি হয়ে ওঠে স্মরণীয় এক সাংস্কৃতিক সমাবেশ।
আয়োজকেরা জানান, প্রবাসে নিয়মিত কবিতা-সংস্কৃতি আয়োজনের উদ্যোগকে আরও জোরদার করতেই এই আয়োজন। দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
আটলান্টা বেঙ্গলি কমিউনিটির এই কবিতা উৎসব প্রবাসী বাঙালি সমাজে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা—যা প্রবাসে বাংলা পরিচয়, ঐক্য ও আবেগকে আরও দৃঢ় করবে বলেই প্রত্যাশা।