ভোট না হলে কালো শক্তি ফিরে আসবে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না।
ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে মানুষ প্রশ্ন করতো, আদৌ ভোট হবে কি না। এখন তারা ধরে নিচ্ছে, ভোট হবেই। কারণ যদি না হয়, তাহলে কালো শক্তি আসবে, হয়তো আবার মার্শাল ল’ দেখা যাবে। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এখন জাতীয় আকাঙ্ক্ষার প্রথম ধাপ।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জনআকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না সতর্ক করে বলেন, আওয়ামী লীগ আর কয়দিন? ছয় মাস বা এক বছর। তখন কাকে টার্গেট করবেন? বিএনপি যদি একক শক্তি হয়ে যায়, তাহলে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কেমন রাজনীতি চান, কী ধরনের রাষ্ট্র চান। তাই রাজনীতির শত্রু-মিত্র নির্ধারণের চেয়ে বড় হলো—আপনি কী আদর্শের পক্ষে?
আওয়ামী লীগের পতনের পর রাজনীতির ভারসাম্য নিয়ে সাবধান করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি নিষিদ্ধ হয়, পালিয়ে যায়—তবে বিএনপি প্রায় একক শক্তিতে পরিণত হবে। যেমন- রাশিয়ার পতনের পর আমেরিকার দুনিয়াজুড়ে একক দাপট তৈরি হয়েছিল। এ অবস্থায় আমাদের দায়িত্ব হবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা, যেন আর কোনো একক আধিপত্য সৃষ্টি না হয়। একক আধিপত্য বিপজ্জনক।
কেউ যদি এই সময়ের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বেইমানি করতে চায়, তবে তার বিরুদ্ধে লড়াই হবেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলন শুধু সরকার পতনের লক্ষ্যে ছিল না। এটি ছিল রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের আন্দোলন—একটি সম্মিলিত জাতীয় চেতনার বিস্ফোরণ। মানুষ এখানে জীবন দিয়েছে জেনেবুঝে। শুধু ছাত্র নয়—মা, শিশু এমনকি কিশোররাও রাস্তায় নেমেছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান কোনো হঠাৎ ঘটা ঘটনা নয়, এটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নিয়েছে। তারা জানত গুলি চলবে, তবু পিছু হটেনি। আমি নিজ চোখে দেখেছি—একজন মা তার শিশুকে নিয়ে রাস্তায় এসেছেন, জানেন আশপাশে গুলি চলছে, তবু ফিরে যাননি। এটাই আকাঙ্ক্ষার শক্তি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু সরকার বদলাতে চাইনি, আমরা রাজনীতি বদলাতে চাই। আজ যারা উপদেষ্টা, তারা হয়তো আগামী দিনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হবেন না। রাজনীতির কাঠামোগত রূপান্তর জরুরি। আজ বড় বড় দলগুলো যারা অতীতে একসঙ্গে বসতো না, এখন তারা আলোচনায় বসছে। এটাও পরিবর্তনের সূচনা।
মান্না তার বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন এই গণআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে। নতুন রাজনীতি গড়তে হলে পুরনো ধ্যান-ধারণা ও চর্চা ভেঙে ফেলতে হবে। আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বেইমানি নয়, বরং সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের লড়াই-ই হবে রাজনীতির নতুন ভিত্তি।