ইনফ্লেশন রিফান্ড পাবেন কারা 

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৫ মে ২০২৫, ১৫:৫১

চলতি বছর ‘ইনফ্লেশন রিফান্ড’ চেক পাচ্ছেন নিউইয়র্কের প্রায় ৮ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দা। গভর্নর ক্যাথি হোকুল ঘোষিত এই পরিকল্পনার আওতায় রাজ্যের অতিরিক্ত কর রাজস্ব থেকে ২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে এই সহায়তা বিতরণ করা হবে। এই রিফান্ডের সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে ৪০০ ডলার যা মূলত অতিরিক্ত বিক্রয় কর থেকে সংগৃহীত অর্থ স্টেটবাসীর মধ্যে ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ।
এই কর্মসূচির মোট ব্যয় হবে আনুমানিক ২ বিলিয়ন ডলার। এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে মুদ্রাস্ফীতির চলমান চাপ এবং নিউ ইয়র্কে উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ মোকাবেলায় মধ্যবিত্ত ও কর্মজীবী মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে। এই রিফান্ড পাওয়ার জন্য করদাতাদের আলাদাভাবে কোনো আবেদন করতে হবে না।
নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ফাইন্যান্স ২০২৩ সালের ট্যাক্স রিটার্ন বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ্য করদাতাদের ঠিকানায় চেক পাঠাবে। নিউ ইয়র্ক স্টেট গভর্নরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়; নতুন করে কোনো ফর্ম পূরণ করতে হবে না বা আলাদা করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি যোগ্য হন, তাহলে মেইলের মাধ্যমে চেক পাঠানো হবে।
এই রিফান্ড পাওয়ার জন্য করদাতাকে ২০২৩ সালের নিউইয়র্ক স্টেট ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা থাকতে বা দিতে হবে। যোগ্য হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির স্টেট ভিত্তিক সমন্বিত মোট আয় ১৫০,০০০ ডলার বা তার কম হতে হবে, আর যারা যৌথভাবে ট্যাক্স ফাইল করেছেন তাদের সম্মিলিত আয় ৩০০,০০০ ডলার বা কম হতে হবে। যারা এই নির্ধারিত আয়ের সীমার বেশি আয় করেছেন কিংবা অন্য কারো ট্যাক্স রিটার্নে ‘ডিপেনডেন্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছেন, তারা এই ত্রাণের জন্য যোগ্য হবেন না।
রিফান্ডের পরিমাণ নির্ধারিত হবে করদাতার বার্ষিক আয় ও ফাইলিং স্ট্যাটাস অনুযায়ী। এককভাবে ট্যাক্স ফাইলকারীরা যদি ৭৫,০০০ ডলার বা তার কম আয় করেন, তারা ২০০ ডলার পাবেন; আর যদি তাদের আয় ৭৫,০০১ ডলার থেকে ১৫০,০০০ ডলার এর মধ্যে হয়, তাহলে পাবেন ১৫০ ডলার। যারা যৌথভাবে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করেছেন এবং যাদের সম্মিলিত আয় ১৫০,০০০ ডলার বা তার কম, তারা পাবেন ৪০০ডলার, আর যদি আয় ১৫০,০০১ ডলার থেকে ৩০০,০০০ ডলার হয়, তাহলে পাবেন ৩০০ ডলার।
যদিও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানানো হয়নি, কর্মকর্তারা আশা করছেন যে রিফান্ড চেকগুলো ২০২৫ সালের শরৎকাল অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে পাঠানো শুরু হবে।
এদিকে নিউইয়র্কের শিশুদের জন্য আগামী বছর থেকে কর ছাড়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। ২০২৬ সাল থেকে নিউইয়র্ক রাজ্যে চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট (শিশু কর ছাড়) বাড়ানো হবে। যার ফলে পরিবারগুলো প্রতি শিশুর জন্য আরও বেশি আর্থিক সহায়তা পাবে। গভর্নর ক্যাথি হোকুল এই পরিবর্তনটি ঘোষণা করেছেন। যা রাজ্যের শিশুদের দারিদ্র্য হ্রাস এবং পারিবারিক ব্যয় সামাল দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে চার বছরের কম বয়সী প্রতিটি সন্তানের জন্য পরিবারগুলো বছরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ডলার করে কর ছাড় পাবে, যা বর্তমানে গড়ে ৪৭২ ডলার। আর ৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই কর ছাড় হবে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার পর্যন্ত। বর্তমান গড় ছাড়ের তুলনায় এটি একটি বড় অঙ্কের বৃদ্ধি এবং অনেক পরিবারের জন্য এটি শিক্ষাব্যয়, খাদ্য, পোশাক ও শিশুসেবা খরচ মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিটের যোগ্যতা শর্ত আগের মতোই থাকবে। শিশু অবশ্যই ১৭ বছরের নিচে হতে হবে, বৈধ সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর থাকতে হবে, বছরে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অভিভাবকের সঙ্গে বসবাস করতে হবে এবং তাকে সন্তানের মতো বা যোগ্য আত্মীয় হিসেবে গণ্য হতে হবে। শিশুদের কল্যাণ এবং পারিবারিক সহায়তা নিশ্চিত করতে নিউইয়র্ক রাজ্য সরকার শুধু করছাড় বা নগদ সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে গভর্নর ক্যাথি হোকুল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। যার লক্ষ্য হলো পরিবার ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সমর্থনমূলক পরিবেশ তৈরি করা।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিশুদের যত্ন ব্যবস্থায় বরাদ্দ করা হয়েছে ২.২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির দশ হাজারেরও বেশি পরিবারের জন্য চাইল্ড কেয়ার সাবসিডি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে।
এতে কর্মজীবী বাবা-মা ও অভিভাবকরা শিশুদের যত্ন নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন, যা অর্থনৈতিকভাবে তাদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিতে রাজ্যজুড়ে প্রত্যেক কেজি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ফ্রি স্কুল ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪০ মিলিয়ন ডলার। এতে বছরে গড়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রায় ১,৬০০ ডলার ব্যয় সাশ্রয় হবে। এই কর্মসূচি শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন এবং শিশুদের স্বাস্থ্যকর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।