যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ গতকাল সোমবার সামরিক বাহিনী থেকে চার-তারকা কর্মকর্তার সংখ্যা ২০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে পেন্টাগনে এমন কাটছাঁট মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরকে ‘ঝাঁকুনি’ দিয়েছে।
সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্তরের কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি, হেগসেথ তাঁর এ দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার হচ্ছেন।
ট্রাম্পের সমর্থক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের সাবেক সঞ্চালক হেগসেথ অতি দ্রুততার সঙ্গে দপ্তর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন। তিনি ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মসূচিকে কার্যকর করতে এবং তাঁর মতে বৈষম্যমূলক বিভিন্ন বৈচিত্র্য কর্মসূচি বাদ দিতে একাধিক জেনারেল ও অ্যাডমিরালকে বরখাস্ত করেছেন।
এক চিঠিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ন্যাশনাল গার্ডে জেনারেল অফিসারের সংখ্যা ন্যূনতম ২০ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীতে জেনারেল ও ফ্ল্যাগ অফিসারের সংখ্যা বাড়তি ১০ শতাংশ কমানো হবে। এই চিঠির বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন করেছে রয়টার্স।
এদিকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক ভিডিওতে হেগসেথ বলেন, ‘আরও জেনারেল বা অ্যাডমিরাল থাকলেই যে বেশি সাফল্য আসবে, তা নয়। শীর্ষ কর্মকর্তার সংখ্যা কমানোর নির্দেশ সবকিছু ছেঁটে ফেলার মতো পদক্ষেপ নয়। শীর্ষ কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ কাজ করা হয়নি। এটি (শাস্তি দেওয়া) ভুল ধারণা।’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, তিনি জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের সঙ্গে পরামর্শ করে ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন এবং এর উদ্দেশ্য হলো, ‘কৌশলগত প্রস্তুতির সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা।’
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নিয়োগ অনুমোদনের শুনানিতে হেগসেথ বলেছিলেন, ‘কর্মকর্তাদের সংখ্যা ও যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ের মধ্যে একটি উল্টো সম্পর্ক (কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়লে যুদ্ধ জয়ের সম্ভাবনা কমে) বিদ্যমান রয়েছে।’
ওই সময় মার্কিন সামরিক বাহিনীতে ৪৪টি চার-তারকা পদ ছিল। এর পর থেকে তিনি জয়েন্ট চিফসের চেয়ারম্যান, নৌবাহিনীর শীর্ষ অ্যাডমিরাল ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করেছেন।
রোড আইল্যান্ডের সিনেটর ও সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য জ্যাক রিড হেগসেথের পরিকল্পনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, হেগসেথ আগেও কোনো কারণ ছাড়াই সামরিক নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন।
জ্যাক রিড বলেন, ‘আমি সব সময় প্রতিরক্ষা বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধির পক্ষে ছিলাম। কিন্তু কর্মীদের ব্যাপারে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তথ্য ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে, কোনো ইচ্ছামতো শতকরা হারে নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়া আমাদের সবচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অনেক পদ বাদ দেওয়া কোনো দক্ষতা সৃষ্টি করবে না; বরং এটি সামরিক শক্তিকে পঙ্গু করে দিতে পারে।’
সতর্ক কিন্তু দ্রুত ছাঁটাই
গতকালের ভিডিওতে হেগসেথ বলেন, এই ছাঁটাই সতর্কভাবে হলেও
‘দ্রুততার সঙ্গে’ করা হবে।
তবে কোন কোন পদ ছেঁটে ফেলা হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। পেন্টাগন তার বৈশ্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করছে এবং হেগসেথ কিছু যুদ্ধ-নিয়ন্ত্রণ কমান্ড একত্র করার কথা বিবেচনা করছেন। এসব কমান্ড বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালায় ও চার-তারকা কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালিত হয়।
সম্ভাব্য কিছু বিকল্পের মধ্যে রয়েছে, মার্কিন আফ্রিকান কমান্ডকে মার্কিন ইউরোপীয় কমান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা। এতে চার তারকা কর্মকর্তার একটি পদ কমবে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় অভিযানের দায়িত্বে থাকা মার্কিন দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডকে মার্কিন উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনাও আছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রধান ও কোরিয়ায় মার্কিন বাহিনীগুলোর প্রধানেরাও (চার তারকা কর্মকর্তা) হতে পারেন হেগসেথের কাটছাঁটের শিকার।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পেন্টাগনে পরিবর্তন শুধু ইউনিফর্মধারী কর্মকর্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। গত কয়েক সপ্তাহে তিন শীর্ষ কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন। হেগসেথের চিফ অব স্টাফের নির্দেশে হওয়া একটি তদন্ত গত ২১ মার্চ ফাঁস হওয়ার পর ওই তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়।
ছাঁটাই হওয়া এই কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন হেগসেথের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও সবচেয়ে আস্থাভাজন উপদেষ্টাদের একজন ড্যান ক্যাল্ডওয়েল। ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও তাঁকে গত সপ্তাহে পেন্টাগন থেকে বের করে দেওয়া হয়। বরখাস্ত হওয়া অন্য একজন হলেন হেগসেথের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ড্যারিন সেলনিক।
রয়টার্স