আরব আমিরাতের কাছে যে জায়গায় হারলো বাংলাদেশ!

স্পোর্টস ডেস্ক
  ২০ মে ২০২৫, ২৩:০৬

শেষ পর্যন্ত ব্যবধানটা যদিও ২৭ রানের, তারপরও প্রথম ম্যাচের চালচিত্র ও দৃশ্যপট ভিন্ন হতে পারতো। খুব বেশি ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই। ১৭মে শারজায় প্রথম ম্যাচের শেষ অংশে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান যদি শেষ ২ ওভারে মাত্র ৬ রান না দিতেন, তাহলেই বাংলাদেশের ২৭ রানে জেতা কঠিন হয়ে যেত।
খেলার শেষ ৬ ওভারে আরব আমিরাতের জিততে দরকার ছিল ৬০ রানের। তাদের হাতে ছিল ৬ উইকেট। ওই সময় ১৬ ও ১৮ ওভারে বোলিং করে বাঁ-হাতি পেসার মোস্তাফিজ খুব ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি খাটিয়ে অযথা গতি সঞ্চারের চেষ্টা না করে মাপা লাইন ও লেন্থে বল ফেলার চেষ্টা করেছেন।
সেই সাথে মাঝেমধ্যে পেসে বৈচিত্র্য এনে কখনো একটু স্লোয়ার দিয়ে আবার কোন সময় একটু কাটার টাইপের ছুড়ে আমিরাত ব্যাটারদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখেন এবং ওভার পিছু লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া থেকে বিরত রাখেন। যেখানে ওভারপিছু দরকার ছিল ১০ রান করে, সেখানে মোস্তাফিজের ২ ওভারে রান ওঠে মাত্র ৭। আর তাতেই আরব আমিরাতের ওভার পিছু লক্ষ্যমাত্রায় যায় বেড়ে।
আর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পায় ২৭ রানের স্বস্তির জয়। শঙ্কা ছিল মোস্তাফিজ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে আইপিএলে চলে যাওয়ায় তার জায়গায় তার ভূমিকা কেউ নিতে পারবে কি না?
শারজাহর উইকেটের চরিত্র আচরণ বুঝে, মাঠে আকার জেনে আগের খেলায় মোস্তাফিজ যে লাইন ও লেন্থে গতি কমিয়ে এবং গতিতে বৈচিত্র্য এনে বোলিং করে আরব আমিরাতের ব্যাটারদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রেখেছিলেন, ১৯ মে দ্বিতীয় ম্যাচে শরিফুল, তানজিম সাকিব আর অভিষেক হওয়া নাহিদ রানা তা পারবেন কি না? সে সংশয় কিন্তু ছিল। দেখার বিষয় ছিল বাংলাদেশের তিন পেসার দ্বিতীয় খেলায় জায়গামত বোলিং করতে পারেন কি না?
এক কথায় কেউ তা পারেননি। বাঁহাতি শরিফুল তুলনামূলক ভাল বোলিং করলেও শেষ ওভারে গিয়ে অযথা শর্ট বল করে চার খাবার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় থ্রো করে বাড়তি ৪ রান দিয়ে দলের পরাজয় ত্বরান্বিত করেছেন।
শরিফুল, তানজিম সাকিব ও নাহিদ রানা ৩ পেসারই মাঠের আকার, আয়তন, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ না দেখে অযথা বেশি জোরে এবং খাট লেন্থে বল করে মার খেয়েছেন। শারজাহর মাঠ পাশে কম। লম্বার চেয়ে অন্তত ৭/৮ গজ প্রস্থ কম। এখানে খাট লেন্থে বল ফেলা মানেই ভুল করা।
ব্যাটাররা উইকেটের দু’দিকে শটস খেলে সেগুলো থেকে সর্বাধিক ফায়দা লুটে নিতে পারেন। শরিফুল, নাহিদ রানা আর তানজিম সাকিব কেউই তা মাথায় রেখে বল করেননি। ইচ্ছেমত খাট লেন্থে বল করে প্রচুর মার খেয়েছেন। যেখানে প্রথম খেলায় মোস্তাফিজ ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ১৭ রান।
সেখানে শরিফুল দিয়েছেন দ্বিগুণ; ৩৪ রান। শরিফুল একা নন। অপর ২ পেসার তানজিম সাকিব এবং নাহিদ রানাও বেশ আলগা বোলিং করেছেন। শেষ ওভারে ইয়র্কার ছুঁড়তে গিয়ে কোমরের ওপরে ফুলটচ করে উল্টো আমিরাতকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ সুগম করে দিয়েছেন তানজিম সাকিব। এ ডানহাতি পেসারের ৪ ওভারে রান ওঠে ৫৫। একই অবস্থা ছিল দ্রুত গতির বোলার নাহিদ রানারও।
টি-টোয়েন্টি অভিষেকে বাড়তি গতিতে বল করতে গিয়ে এ অল্প বয়সী ফাস্টবোলারও প্রচুর রান দিয়েছেন। তার ৪ ওভারে রান উঠেছে ৫০। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৩ পেসারের ১১.৫ ওভারে রান উঠেছে ১৩৯। যা ওভার পিছু ছিল ১২ রানের ওপরে। আসলে এই জায়গায়ই মার খেয়েছে বাংলাদেশ।
যেহেতু মোস্তাফিজ নেই। সেখানে পেসার খেলানোর ক্ষেত্রে আরও সতর্ক-সাবধানী হওয়া প্রয়োজন ছিল। তানজিম সাকিব, নাহিদ রানা আর শরিফুল তিনজনই গতি নির্ভর বোলার। গতিই তাদের শেষ কথা। প্রত্যেকে গতি দিয়েই সব করতে চান। পেসে বৈচিত্র্য আনার অভ্যাস ও সামর্থও কম।
পাশে ছোট মাঠে এক সঙ্গে তিন তিনজন এক্সপ্রেস বোলার না খেলিয়ে তুলনামূলক কম গতির হাসান মাহমুদ হতে পারতেন বেটার অপশন। তার বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে। বৈচিত্র্য আনতে পারেন। পেস বাড়ানো কমানোর পাশাপাশি বুদ্ধি খাটিয়ে একটু আধটু সুইং করার চেষ্টাও করেন হাসান মাহমুদ। তার কার্যকরিতার সম্ভাবনা বাকি ৩ জনের চেয়ে বেশি থাকতো। তাকে সুযোগ দিলে হয়ত ৩ পেসার এক সঙ্গে এতটা ব্যর্থ হতেন না।