কী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)? বাংলাদেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটির আগামী নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা মেরুকরণ। যার অংশ হিসেবে শোনা যাচ্ছে নতুন নতুন কথাবার্তা, নানা গুঞ্জন। ফারুক আহমেদকে সরিয়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নতুন বোর্ড সভাপতি করার কথা শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি, সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে আদৌ নির্বাচন হবে কি না! তা না হলে, বোর্ডের কী হবে?
চলতি বছর অক্টোবরের বোর্ড নির্বাচন এগিয়ে এনে যে জুলাই-আগস্টে আয়োজনের প্রক্রিয়া চলছিল, তার কি হলো? সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের সাথে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন কে বা কারা?
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল কি সত্যিই খুব হাই প্রোফাইল ক্যান্ডিডেট হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে যাচ্ছেন? বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক, সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দীন কি শেষ পর্যন্ত বিসিবি প্রধান পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী হবেন? নাকি তার নির্বাচন করারই ইচ্ছে নেই? এসব খবর জানতে কৌতুহল ক্রিকেটপ্রেমীদের।
এর বাইরে আরও দুটি খবর ক্রিকেট পাড়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। যার একটি হলো আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনার খবর। গণমাধ্যমে সেভাবে খবরটা না আসলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান এবং বর্তমানে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার পদে কর্মরত আমিনুল ইসলাম বুলবুল নাকি বোর্ড সভাপতি হচ্ছেন?
মানে ফারুক আহমেদকে সড়িয়ে বুলবুলকেই নাকি পরবর্তী সভাপতি করা হচ্ছে! যোগ্যতা, দক্ষতা এবং ক্রিকেটীয় কর্মকান্ডে অভিজ্ঞতার মানদন্ডে আমিনুল ইসলাম বুলবুল নিঃসন্দেহে অনেক যোগ্য। দক্ষ এবং অন্যতম সেরা পছন্দ। কিন্তু তিনি আইসিসির যে পদে আছেন, সেটা ছেড়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের দায়িত্বভার নিতে রাজি হবেন কি না? সেটাই বিরাট এক প্রশ্ন।
আর পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন উড়ছে ক্রিকেট পাড়ায়। তাহলো, আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে কি সত্যি সত্যিই সরকারের উর্ধ্বতন মহল থেকে বিসিবি প্রধান করার কথা ভাবা হয়েছে বা হচ্ছে কি না? এবং হয়ে থাকলে তাকে আসলে সরকারের কোন পর্যায় থেকে বিসিবি প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা ও দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগগুলোর প্রধান অভিভাবক সংগঠন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া নিজে আমিনুল ইসলামকে ফোনে বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব করেছেন? ক্রীড়া মন্ত্রনালয় ও এনএসসির উচ্চ পর্যায়ের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মুখ ফুটে এমন কথা বলেননি এখনো। কোন সূত্রই তা নিশ্চিত করেনি।
বরং এনএসসির ঘনিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের সচিব, এনএসসি সচিবের কেউ ফোন করেননি।
এদিকে বিসিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবি সভাপতি হওয়ার খবরকে ‘গুজব’ বলে অভিহিত করেছেন। বরং ক্রিকেট পাড়া, শেরে বাংলার আশপাশ ও ঢাকার ক্লাব পাড়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে অন্য খবর।
বেশ কটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নিকট ভবিষ্যতে বিসিবির নির্বাচন হচ্ছে না। নিকট ভবিষ্যতই শুধু না, আপাতত বিসিবিতে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাই খুব কম।
বরং নির্বাচনের আগে একটি অন্তবর্তীকালীন বোর্ড গঠনের চিন্তা-ভাবনা চলছে এবং ভেতরে ভেতরে তার ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ও চলছে।
এটুকু শুনে ভাবছেন, তাহলে বুঝি জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান এবং আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আমিনুল ইসলামস বুলবুলের বিসিবির সেই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির প্রধান হওয়ার সম্ভাবনাই খুব বেশি।
আসলে তা নয়। বুলবুল নন, বরং বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের নেতৃত্বেই ১০-১২ সদস্যর নতুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনের জোর চিন্তা-ভাবনা চলছে এবং ভেতরে ভেতরে তার প্রাথমিক প্রক্রিয়াও নাকি শুরু হয়ে গেছে।
বোর্ডের বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ফারুক আহমেদই হবেন সেই অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের প্রধান। তার সাথে বর্তমান বোর্ডের যে ৮-১০ জন পরিচালক আছেন, তাদের বেশিরভাগই হয়তো ওই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে থাকবেন না।
বর্তমান পরিচালক পর্ষদের হাতেগোনা কয়েকজন পরিচালকের সেই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে থাকার সম্ভাবনা আছে। বলে রাখা ভাল, বর্তমানে ফারুক আহমেদের সাথে বিসিবিতে মাহবুব আনাম, নাজমুল আবেদিন ফাহিম, আকরাম খান, ইফতিখার রহমান মিঠু, ফাহিম সিনহা, মঞ্জুরুল আলম, সালাউদ্দীন প্রমুখ পরিচালকরা অ্যাকটিভ।
কিন্তু শুনে অবাক হতে পারেন, তাদের বড় অংশই নাকি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে নাও থাকতে পারেন। কেন থাকতে না পারার সম্ভাবনা বেশি?
গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নতুন বোর্ড প্রধান হিসেবে ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর সময় যত গড়িয়েছে, তত বোর্ড সভাপতির সঙ্গে মাহবুব আনাম, ফাহিম সিনহা আর ইফতিখার রহমান মিঠুর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কেন সে দূরত্ব তৈরি হয়েছে? মাহবুব আনাম, ফাহিম সিনহা আর ইফতিখার রহমান মিঠুর ব্যাপারে হঠাৎ কী কারণে নেতিবাচক মানসিকতা ফারুকপন্থীদের?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাজমুল হাসান পাপনের অন্যতম সহযোগী ইসমাইল হোসেন মল্লিকরা যে ক্লাবগুলো চালাতেন এবং যে ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ ছিল তাদেরই হাতে, তার বেশিরভাগই এখন মাহবুব আনাম, ফাহিম সিনহা আর ইফতিখার রহমান মিঠুর হাতে।
বিষয়টা ফারুক আহমেদ-এর পক্ষ মোটেই ভালভাবে নিচ্ছে না। তাই তাদের ব্যাপারে একটা নেতিবাচক চিন্তার উন্মেষ ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি হলে যদি তাতে মাহবুব আনাম, ফাহিম সিনহা আর ইফতিখার রহমান মিঠুরা না থাকেন, তাতে অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না।
এক পক্ষ বলছে মাহবুব আনাম, ফাহিম সিনহা আর ইফতিখার রহমান মিঠুর মত অতি-কার্যকর পরিচালক অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে নাও থাকতে পারেন। আবার অন্য সূত্রের দাবি, নাহ! মাহবুব আনাম হয়ত শেষ পর্যন্ত থেকে যাবেন। তবে ফাহিম সিনহার থাকার সম্ভাবনা খুব কম। আবার ইফতিখার রহমান মিঠুর ব্যাপারেও নেতিবাচক মানসিকতা কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির রূপকারদের।
তবে নাজমুল আবেদিন ফাহিম, মঞ্জুরুল আলম, সালাউদ্দীনরা হয়ত থেকে যাবেন। পাশাপাশি আলী আহসান বাবু, লুৎফর রহমান বাদল, আজিজ আল কায়সার টিটো, রফিকুল ইসলাম বাবু, শওকত আজিজ রাসেল, আওয়াল চৌধুরী ভুলু এবং ইশতিয়াক সাদেক অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিতে যুক্ত হতে পারেন। পাশাপাশি জিয়াউর রহমান তপু, আদনান রহমান দিপন এবং তারিকুল ইসলাম টিটুর নামও শোনা যাচ্ছে।