গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মানসিক চাপে ভুগে সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে।
হারেৎজ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ১৭ জন সেনা আত্মহত্যা করেন, যার মধ্যে সাতজন গাজা যুদ্ধ শুরুর পরপরই আত্মহত্যা করেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে মনোরোগ চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মীর ঘাটতি রয়েছে, যা সেনাদের মানসিক সহায়তার অভাবে ভুগতে বাধ্য করছে। বিশেষ করে, যারা মৃত সেনাদের পরিচয় শনাক্ত করার মতো ভয়াবহ কাজের সঙ্গে যুক্ত, তারা মারাত্মক মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিমাসেই শত শত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেনাকে সেনাবাহিনীর পুনর্বাসন বিভাগে ভর্তি করা হচ্ছে। তাদের অনেকেই যুদ্ধ-পরবর্তী ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত বলে জানায় হারেৎজ।
সোমবার দক্ষিণ ইসরায়েলের ওফাকিম শহরে এক রিজার্ভ সেনার মরদেহ তার বাড়িতে পাওয়া যায়। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। ওই সেনা মৃত সেনাদের দেহাবশেষ শনাক্তকারী একটি ইউনিটে কাজ করতেন।
ইসরায়েলি সামরিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৮৯৮ জন সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৬,১৩৪ জন। তবে অভ্যন্তরীণভাবে অভিযোগ উঠেছে, সেনাবাহিনী প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা গোপন করছে।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অব্যাহত বোমাবর্ষণ গাজার অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং সেখানে চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) ইসরায়েলের মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেম ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েল এক বিবৃতিতে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তোলে। তারা জানান, সেখানে পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনি সমাজকে ধ্বংস করা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) একটি মামলা চলছে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি