নোয়াখালী থেকে যেভাবে ফ্রান্সে গেলেন সেই ‘লাইলী’ 

বিনোদন ডেস্ক
  ২৮ জুন ২০২৫, ১৪:১৬

সালাহউদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক ‘কবুলীয়তনামা’র লাইলী চরিত্রে পরিচিতি পান রেহানা রাখি। ‘দ্য ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ার’, ‘মেয়েটি কথা বলিবে প্রেম করিবে না’সহ বেশ কিছু নাটকের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০১৮ সালে শোবিজ ছেড়ে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। সেখানে গিয়েও অভিনয় করতে ভোলেননি তিনি। মাধ্যম বদলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কনটেন্ট নিয়ে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন তিনি। রাখির নোয়াখালী থেকে ফ্রান্স যাত্রার গল্প শুনেছেন নাজমুল হক।
ছোট থেকেই গান করতেন রেহানা রাখি। এর সঙ্গে স্কুলে অভিনয়, উপস্থিত বক্তৃতাতেও তিনি ছিলেন পটু। যেকোনো প্রতিযোগিতায় তাঁর কাছ থেকে পুরস্কার কেউ নিতে পারত না। শৈশবের সেসব স্মৃতি হাতড়ে রাখি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে গায়ের রং কালো ছিল বলে মা আমাকে নিয়ে গান করত মার কালা চান মাই তোমারে গান শেখাব। মানুষ যখন ছোট থাকে, তখন কোনো স্বপ্ন থাকে না। মানুষ যখন বুঝতে শেখে, জানতে শেখে—কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, তখন মানুষের স্বপ্ন তৈরি হয়। ঠিক এর ব্যতিক্রম আমিও ছিলাম না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার শুরু থেকেই স্কুলে গান করতাম। সব সময় গানের পুরস্কার পেতাম। উপস্থিত বক্তৃতাতেও খুব নাম করেছিলাম।’  
স্কুল পেরিয়ে যখন রাখি কলেজে, তখন তাঁর অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তিনি ভাবতে থাকেন ছোট সময় তো ভালো অভিনয় করতাম, এখন যদি একটু অভিনয়ের সুযোগ পেতাম! ইশ, যদি টেলিভিশনে একটু দেখানো যেত। এই ভাবনা থেকেই রাখি অডিশন দেন সুপারহিরো সুপার হিরোইন প্রতিযোগিতায়। অডিশনে চট্টগ্রাম পর্বে ১১ জন মেয়ের মধ্যে ৬ নম্বর স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি। এরপর তিনি পাড়ি জমান ঢাকায়। পরে নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। নির্মাতা নজরুল কুরাইশীর ‘ব্ল্যাকমেল’ নাটক দিয়ে তাঁর অভিনয়ের ক্যারিয়ার শুরু হয়। প্রথমে ছোট ছোট চরিত্র দিয়ে শুরু করে পরে জনপ্রিয় অনেক নাটকে অভিনয় করেন তিনি।  
অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে রাখি বলেন, ‘আমি কখনো নায়িকা হতে ঢাকা শহরে আসিনি। চেয়েছি আমি একজন ভালো ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হব। শুধু একটা চরিত্রের জন্য অনেকের কাছে অনুরোধ করতাম। এভাবে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পাই। লাইলীসহ আমার বেশ কিছু চরিত্র নিয়ে এখনো মানুষের ভালোবাসা পাই।’
২০১৬ সালে কাজের পরিমাণ কমতে থাকে রাখির। তবুও টিকে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু যখন আর টিকতে পারছিলেন না, ২০১৮ সালে তিনি পাড়ি জমান ফ্রান্সে। তবে ইউরোপ গিয়েও অভিনয়ের নেশা মাথায় সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে। ২০১৯ সালে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন তিনি। বিভিন্ন টপিকে অভিনয়, জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কনটেন্ট বানাতে শুরু করেন তিনি। গত পাঁচ বছরে তাঁর ‘রেহানা রাখি ভ্লগ’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার পেরিয়েছে ৬ লাখ, আর একই নামের ফেসবুক পেজ এ অনুসারী ২৭ লাখের বেশি।


রাখি বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বরে ৬ তারিখে ইউটিউব চ্যানেল খুলি। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও বানাতে শুরু করি। বলা যায় সারা দিনই চ্যানেল নিয়ে পরিশ্রম করতাম। তবে তেমন সাড়া পাচ্ছিলাম না। টানা সাত মাস কষ্ট করার পর চ্যানেলটি ভাইরাল হয়। অনেকেই আমাকে চিনতে পারেন, বলা যায় লাভলু (সালাহউদ্দিন লাভলু) ভাইয়ের জনপ্রিয় নাটক ‘কবুলীয়তনামা’র সেই লাইলী চরিত্রের আমাকে চিনতে পেরে সবাই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করা শুরু করেন। এরপর আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, মানুষকে আর চেনাতে হয়নি ও ভাই আমি রেহানা রাখি।’
এখানেও রাখিকে সংগ্রাম করতে হয়। তাঁর ফেসবুক অনুসারী তখন পাঁচ লাখ। নিয়মিতই ভিডিও আপলোড দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই তাঁর পেজটি হ্যাক হয়। মাথায় যেন তাঁর আকাশ ভেঙে পড়ে। মন ভেঙে যায় তাঁর। ভাবতে থাকেন আর হয়তো এসব করা হবে না। একটা পেজ দাঁড় করানো তো মুখের কথা না। আবার এমন ভাবনাও তাঁর মাথায় এসেছে, অভিনয় যখন পারি, ঘুরে আমি দাঁড়াবই। মানসিক শক্তি সঞ্চার করে আবার নতুন পেজ খোলেন রাখি। পরিশ্রম ও দর্শকের ভালোবাসায় আগের পেজকেও ছাড়িয়ে যায় এটি। রাখি বলেন, ‘আস্তে আস্তে চ্যানেলটি যখন বড় হচ্ছিল, তখনই হ্যাক হয়। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে দমে যাইনি। আবার শুরু করি আমার সংগ্রাম, মানুষের ভালোবাসা যেন দ্বিগুণ আকারে ফিরেছে। খুব আনন্দ লাগে, বাংলাদেশ এবং প্রতিটা দেশের বাঙালিদের অনেকেই আমাকে চেনেন। যখন রাস্তা দিয়ে বিদেশের মাটিতে হেঁটে যাই, দশটা বাঙালির মধ্যে একজন হলেও বলেন আপনার ভিডিও আমার ভালো লাগে। অনেকেই ছবি তুলতে চান, তখন মনে অনেক আনন্দ হয়।’
ভক্তের সঙ্গে সমালোচকও জুটেছে রাখির। এগুলো নিয়ে একসময় মন খারাপ হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। সবার ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান রাখি। রাখি বলেন, ‘অনেক সমালোচকও রয়েছেন আমার। মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয়, কেন তাঁরা আমাকে ঘৃণা করেন! কেন তাঁরা আমাকে হিংসা করেন। আমি কি তাঁদের কোনো ক্ষতি করেছি? কেন আমি তাঁদের বিরক্তির কারণ! দিন শেষে আবার মনকে বোঝাই, আসলে পৃথিবীতে সব মানুষ সবার পছন্দের তালিকায় থাকে না। এর মধ্যে হয়তোবা আমিও একজন।’