নথিপত্রহীন ইমিগ্র্যান্টদের সচেতন থাকার আহ্বান মামদানির

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৯

নিউইয়র্কের মেয়র–নির্বাচিত জোহরান মামদানি বলেছেন, নথিপত্রহীন ইমিগ্র্যান্টদের অনুচিত বা বেআইনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার বিরুদ্ধে আইনসম্মতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। তিনি বাসিন্দাদের আহ্বান জানিয়েছেন—যথাযথ ওয়ারেন্ট ছাড়া ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া, নীরব থাকার অধিকার প্রয়োগ করা এবং যে কোনো সাক্ষাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম আইনের সীমার মধ্যে থেকে রেকর্ড করা।
গত রোববার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় মামদানি নিউইয়র্কবাসীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়া বা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানতে হবে—আপনি স্বাধীনভাবে সরে যেতে পারেন কি না। আগামী ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের আগে মামদানি তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথাও তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে অভিবাসীদের জন্য আইনি সহায়তা সম্প্রসারণ, নগর ভবনে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)–এর প্রবেশাধিকার বন্ধ করা এবং নগর কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য যেন অভিবাসন প্রয়োগে ব্যবহার না করা যায়—সে জন্য ডেটা–গোপনীয়তা নীতিমালা আরও জোরদার করা।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সব সময় অভিবাসীদের স্বাগত জানায়।
এই বক্তব্যের পেছনে রয়েছে গত মাসে ক্যানাল স্ট্রিটের কাছে আইসিই–র একটি অভিযান পরিচালনার চেষ্টা। সে সময় ফেডারেল কর্মকর্তারা হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একটি পার্কিং গ্যারেজে জড়ো হয়ে আশপাশের এলাকায় অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা যায়। খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভকারীরা সেখানে জড়ো হয়ে অবরোধ করেন, ফলে কর্মকর্তারা বেরোতে পারেননি। সড়ক ছাড়ার নির্দেশ অমান্য করায় নিউইয়র্ক পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। শেষ পর্যন্ত ফেডারেল দলটি অভিযান স্থগিত করে সেখান থেকে সরে যায়।
মামদানির মতে, এই ভিডিওটি তাঁর প্রশাসনের মাধ্যমে নিউইয়র্ককে ‘ট্রাম্প–প্রুফ’ করার একটি রূপরেখা। এর মাধ্যমে ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা সীমিত করতে স্থানীয় আইনগুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অঙ্গরাজ্যের রাজধানী অ্যালবানিতেও ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। গভর্নর ক্যাথি হোকুল কয়েক মাস ধরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে ফেডারেল অভিবাসন অভিযান বাড়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করছেন।
হোকুল তাঁর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দলকে নির্দেশ দিয়েছেন—লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ও পোর্টল্যান্ডে যেভাবে দ্রুতগতির ফেডারেল অভিযান দেখা গেছে, নিউইয়র্কে তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে যেন তার জন্য প্রস্তুত থাকা হয়। অঙ্গরাজ্যের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিশনার জ্যাকি ব্রে জানান, তিনি ওই শহরগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছেন—অনেক ক্ষেত্রেই কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই ফেডারেল বাহিনী হাজির হয়েছে, নিয়মিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং পাড়া–মহল্লার মানুষ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
ব্রে বলেন, আমরা যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতায় ঢুকে পড়েছি। তিনি জানান, অন্যান্য শহরের কর্মকর্তারা এমন পরিস্থিতির কথা বলেছেন, যা এক বছর আগেও কল্পনা করা যেত না—কখনো কখনো ফেডারেল কর্মকর্তারা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
অক্টোবর থেকে হোকুল প্রশাসন ব্যবসায়ী, ধর্মীয় নেতা ও অধিকারকর্মী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সম্ভাব্য ফেডারেল অভিযান বেড়ে গেলে কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছে। ব্রে বলেন, নিউইয়র্কবাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তা নথিভুক্ত করতে পারেন এবং প্রতিবেশীদের তাদের অধিকার বোঝাতে সাহায্য করতে পারেন। তবে গ্রেপ্তারে শারীরিক বাধা দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশীদের রক্ষা করার আইনি পথ রয়েছে। আইন ভাঙলে শেষ পর্যন্ত কারও সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না।
ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিউইয়র্কের টানাপোড়েন কেবল ক্যানাল স্ট্রিটের ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারপ্রাপ্ত আইসিই পরিচালক টড লায়নস সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসকে চিঠি লিখে সাত হাজারের বেশি ঝুলে থাকা ফেডারেল ডিটেইনার অনুরোধ মানার আহ্বান জানান। তাঁর অভিযোগ, ফেডারেল অনুরোধ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চলতি বছরে প্রায় একই সংখ্যক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছে। আইসিই দাবি করেছে, এসবের মধ্যে সহিংসতা ও অস্ত্র–সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনাও রয়েছে। তবে অঙ্গরাজ্য কর্মকর্তারা বলেন, অনেক মামলাই এখনও নিষ্পত্তি হয়নি এবং নিউইয়র্ক আইন অনুযায়ী বিচারকের স্বাক্ষরযুক্ত ওয়ারেন্ট ছাড়া কেবল বেসামরিক অভিবাসন প্রয়োগের জন্য কাউকে নির্ধারিত মুক্তির সময়ের পর আটকে রাখা যায় না।
ভিডিও বার্তায় মামদানি এসব আইনি বিরোধের কথাও আগাম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেক সময় আইসিই এমন প্রশাসনিক কাগজপত্র দেখায়, যা দেখতে আদালতের নথির মতো হলেও সেগুলো ঘরে প্রবেশের আইনগত অনুমতি দেয় না।