দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী কেন মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল?

সালেক খোকন
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:১১

একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, তখন পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে ছিল ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের নিকট-বন্ধু ও উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার মনে করা হয় চীনকে। অথচ একাত্তরে পাকিস্তানের পাশে ছিল তারা। চীন পাকিস্তানে ‘উপহার’ হিসেবে ২৫৫টি ট্যাংক ও এক স্কোয়াড্রন ইল-২৮ বিমান এবং ২০০ সামরিক প্রশিক্ষক পাঠিয়েছিল। শুধু ১৯৭১ সালেই চীন পাকিস্তানকে প্রদান করেছিল ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সামরিক উপকরণ, যার বেশিরভাগ ব্যবহার করা হয়েছিল বাঙালি নিধনে।
গণহত্যা শুরুর পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের কোনও পর্যায়েই চীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার নিন্দা করেনি। তবে ওই সময়ও পিকিংপন্থি কমিউনিস্টদের ব্যাপারে দেশটি ঠিকই খোঁজ-খবর রাখতো। ওই বিষয়টি উঠে আসে ইয়াহিয়ার বাঙালি উপদেষ্টা জি ডব্লিউ চৌধুরীর লেখা ‘লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’ গ্রন্থে।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘১৯৭১ সালের নভেম্বরে অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জুলফিকার আলী ভুট্টো পিকিং গেলে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন লাই ভুট্টোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, পাকিস্তানি সেনা হামলায় ৬৪ জন পিকিংপন্থি রাজনীতিবিদ-কর্মী নিহত হয়েছে। ভুট্টো এর জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন।”
একাত্তরে দেশের অভ্যন্তরে চীনপন্থি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা দেবেন সিকদার, এম.এ. মতিন, মোহাম্মদ আলাউদ্দিনরা চারু মজুমদারের নকশালবাড়ি নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তবে চীনের প্রতি আনুগত্যের অবস্থান থেকে সরে এসে রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, কাজী জাফর, ক্র্যাক প্লাটুনের বীর যোদ্ধা রুমীর মতো কেউ কেউ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বাকিরা পাকিস্তানের প্রতি অনুগত থাকেন। আর সিরাজ সিকদার, মানস ঘোষদের মতো কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ আখ্যা দিয়ে পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন।
তাদের চীনপ্রীতি স্বাধীন বাংলাদেশেও অব্যাহত ছিল। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সিরাজ সিকদারের পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ কায়েমের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেয়। আর হক, তোহা, মতিন, আলাউদ্দিন, দেবেন সিকদার, শান্তি সেন, অমল সেনের মতো কিছু দলের নেতারা ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ স্লোগান দিয়ে ‘শ্রেণি-শত্রু খতম’-এর পথ বেছে নেন। মওলানা ভাসানীও তাদের হয়ে পল্টনের জনসভায় হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি নতুন পতাকা ওড়াব”। ওই ঘোষণার পরপর জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘মুসলিম বাংলা’ প্রতিষ্ঠার জন্য ভাসানীকে পাকিস্তান সফরেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
এসব ঘটনায় এটা স্পষ্ট করে যে বাংলাদেশ প্রশ্নে চীন ও তার অনুসারীদের কার্যকলাপ স্বাধীনতার পরও অব্যাহত ছিল। ১৯৭২ সালের ২৫ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির প্রস্তাবে চীন প্রথম ভেটো প্রয়োগ করে। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও চীন সেটি দেয় বহু পরে, ১৯৭৫ সালে। (তথ্যসূত্র: একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের ভূমিকা: বদরুদ্দীন উমর, মূলধারা ৭১: মইদুল হাসান, তালুকদার মনিরুজ্জামান-The Bangladesh Revolution and its Aftermath, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, ১৫ খণ্ড)।
একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্র ছিল চীনের বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় যুক্তরাষ্ট্র পাশে ছিল পাকিস্তানের। মার্কিন কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ওই দেশ থেকে অস্ত্র আর অর্থ গিয়েছে পাকিস্তানে। কংগ্রেসের নজরদারি এড়াতে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ইরান ও জর্ডানের মাধ্যমে পাকিস্তানে বোমারু বিমান পাঠানোর আয়োজন করেছিলেন। নিক্সন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকাতে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিতেও দ্বিধা করেননি। সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে বাংলাদেশকে চূড়ান্ত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের নিকট-বন্ধু ও উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার মনে করা হয় চীনকে। অথচ একাত্তরে পাকিস্তানের পাশে ছিল তারা। চীন পাকিস্তানে ‘উপহার’ হিসেবে ২৫৫টি ট্যাংক ও এক স্কোয়াড্রন ইল-২৮ বিমান এবং ২০০ সামরিক প্রশিক্ষক পাঠিয়েছিল। শুধু ১৯৭১ সালেই চীন পাকিস্তানকে প্রদান করেছিল ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সামরিক উপকরণ, যার বেশিরভাগ ব্যবহার করা হয়েছিল বাঙালি নিধনে।


ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্যারি ব্যাস রচিত ব্লাড টেলিগ্রাম নিক্সন-কিসিঞ্জারের ওই সময়কার ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক গ্রন্থ। অধ্যাপক গ্যারি নথিপত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়েই একাত্তর প্রসঙ্গে সেখানে বলেছেন, ‘‘নিক্সন-কিসিঞ্জার উভয়েই জানতেন বাংলাদেশে ভয়াবহ গণহত্যা চলছে। লাখ লাখ মানুষ হতাহত হয়েছে, সিআইএ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে তাদের সে কথা জানানো হয়েছিল। ঢাকায় যা হচ্ছে, তা গণহত্যা ভিন্ন অন্য কিছু নয়—এ কথা মার্কিন কূটনীতিকেরাই তাদের জানিয়েছিল। কিন্তু তারা মুখ বুঁজে ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, কিসিঞ্জার এ নিয়ে টুঁ-শব্দটি না করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশও দেন।”
পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নির্দেশে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজকে বঙ্গোপসাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সপ্তম নৌ-বহর হিসেবে পরিচিত তাদের ওই নৌ-বহরে ছিল নয়টি জাহাজ। ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান অভিমুখে ওই রণতরি ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। কিন্তু তার আগেই সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১২ থেকে ১৫টি রণতরি পাঠায়। তাদের রণতরিতে গাইডেড মিসাইল এবং পরমাণু অস্ত্রবাহী সাবমেরিনও ছিল।
সোভিয়েত রণতরি অবস্থান নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন পাল্টা সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিন্তাও করেনি। বরং মার্কিন রণতরি গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৪ থেকে ৬ তারিখের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দীর্ঘ আলোচনা হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করে পূর্ব-পাকিস্তানে যুদ্ধ বন্ধ করতে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভেটো দেয়, কেননা তখন মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় আসন্ন ছিল।
এদিকে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসররাও হত্যাযজ্ঞের নতুন মিশন নিয়ে নামে। তারা তালিকা অনুযায়ী হত্যা করে দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের। এর মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
পাকিস্তানের পরাজয় তখন অবশ্যম্ভাবী। এটা বুঝতে পেরে তিনি ঠান্ডামাথায় পরিকল্পনা করে নির্দেশ দেন ডিসেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করার। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ডক্টর রাব্বি, ডক্টর আলীম, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সন্তোষ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গভর্নর হাউজ থেকে রাও ফরমান আলীর একটি ডায়েরি পাওয়া যায়। সেখানে অনেক নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীর নামও লেখা ছিল। (তথ্যসূত্র: ৭১-গণহত্যার দলিল, একাত্তরের ঘাতক দালাল কে কোথায়?, ফখরুল আবেদীনের তথ্যচিত্র-আলবদর, মুক্তিযুদ্ধ তারপর-গোলাম মুরশিদ)।
আবার ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে পোল্যান্ড একটি প্রস্তাব তোলে। ওই প্রস্তাবের অন্যতম বিষয় ছিল—যুদ্ধবিরতি এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহার। পাকিস্তানের প্রতিনিধি জুলফিকার আলী ভুট্টো এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ওইদিন পোল্যান্ডের প্রস্তাব সংবলিত কাগজ ছিঁড়ে টুকরো-টুকরো করে নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বেরিয়ে যান। ওই প্রস্তাবকে তিনি অপমানসূচক ‘আত্মসমর্পণের দলিল’ হিসেবেও বর্ণনা করেছিলেন। অথচ মাত্র একদিন পরই আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল পাকিস্তানকে (তথ্যসূত্র: স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, ১৫ খণ্ড, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধু-হাসান ফেরদৌস)।
১৯৭১-এর ডিসেম্বরে ঢাকার চারদিকে মিত্রবাহিনীর অগ্রযাত্রা দেখে ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী বুঝে যান তাদের পতন আসন্ন। ইয়াহিয়ার অনুমতি নিয়ে তিনি জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি ভারতের প্রধান সেনাপতি মানেকশকেও বিষয়টি জানান।
১৬ ডিসেম্বর দুপুরে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের হেডকোয়ার্টারে চলে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজী, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ। যৌথ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব, মেজর জেনারেল গন্ধর্ভ সিং নাগরা ও কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী।
বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন নিয়াজী। দলিলে পাকিস্তানি নৌ-পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার রিয়ার-অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শরিফ, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় বিমানবাহিনীর কমান্ডার এয়ার ভাইস-মার্শাল প্যাট্রিক ডেসমন্ড কালাঘানও স্বাক্ষর করেন।
আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। ভারতের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন ভারতীয় ৪র্থ কোরের কমান্ডার লে. জেনারেল সগত সিং, পূর্বাঞ্চলীয় বিমানবাহিনীর কমান্ডার এয়ার মার্শাল হরি চাঁদ দেওয়ান ও ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব (তথ্যসূত্র: সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা-লে. জেনারেল জে এফ আর জেকব, নিয়াজির আত্মসমর্পণের দলিল-সিদ্দিক সালিক)।
আত্মসমর্পণের বিষয় এলেই অনেকেই প্রশ্ন তোলেন মুক্তিবাহিনীর পরিবর্তে কেন মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী?
এ ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের ‘একাত্তরের রণাঙ্গন অকথিত কিছু কথা’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘‘যুদ্ধ-বিগ্রহ, জয়-পরাজয়, আত্মসমর্পণ সম্পর্কে জেনেভা কনভেনশনের আন্তর্জাতিক নীতিমালা রয়েছে। জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এ নীতিমালা মানতে বাধ্য। ওই সময় বাংলাদেশ জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ ছিল না। ফলে কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করতে পারে না।
তাছাড়া শেষের দিকে সশস্ত্র যুদ্ধটি ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের অধীনে হলেও যুদ্ধের অপারেটিং পার্টের পুরো কমান্ডে ছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল শ্যাম মানেকশ। এ কারণেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জেনারেল মানেকশকে রিপ্রেজেন্ট করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরা। সেখানে সাক্ষী হিসেবে বাংলাদেশি বাহিনীর পক্ষ থেকে এ কে খন্দকারও ছিলেন। অর্থাৎ পাকিস্তান ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিকট নয়, বরং আত্মসমর্পণ করেছিল যৌথ বাহিনীর কাছে। ফলে এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ—সেটি বলারও সুযোগ নেই।”
১৯৭১ সালে তারা যে সীমাহীন গণহত্যা চালিয়েছে, তার জন্য বিন্দুমাত্র দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চায়নি পাকিস্তানের কোনও সরকার, বিচার করেনি তৎকালীন একজন জেনারেলেরও। বরং যখনই পেরেছে তখনই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
একাত্তরে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনকে নির্যাতন এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা সবাই ছিলেন আইডোলজিক্যাল যোদ্ধা। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার বুকে তখন একটাই আগুন ছিল— মাতৃভূমিকে মুক্ত করা। ওই চেতনা এখন অনেকটাই অনুপস্থিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক
সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন