অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে?

প্রশ্ন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০১

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যেতে দেখছি। আমরা রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনাবলি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াগুলো দেখছি। সংস্কার কমিটির সংস্কার প্রস্তাব যেন মাঝপথ থেকে এগোতে পারছে না। এটা কি আকাঙ্ক্ষার অভাব, সক্ষমতার অভাব নাকি বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে ছিল? অন্তর্বর্তী সরকার কী পথ হারিয়েছে? এই প্রশ্নটি আমাদের মনের ভেতর বড় আকারে আসছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামের সূচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন বিষয়ে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ওই প্ল্যাটফর্মে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচের গুরুত্ব তুলে ধরেন। 
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই মুহূর্তে একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ঝড়ের আঘাত আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সামাজিক জীবনসহ সব ক্ষেত্রে অনুভূত হচ্ছে। ঝড় যখন আসে, তখন মানুষ তার সবচেয়ে বড় সম্পদ রক্ষা করার চেষ্টা করে। এ মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো জুলাই অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা পেয়েছি সেটা রক্ষা করা। সেই বৈষম্যবিরোধী চেতনা বাস্তবায়নের জন্য মানুষের মধ্যে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা জেগেছে সেটা ধরে রাখা একটা বড় কাজ হিসেবে দেখি। 
ওই বৈষম্যবিরোধী চেতনা আগামী দিনে রাষ্ট্রযন্ত্রসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে কিভাবে আমরা স্থাপন করব সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই আজকের নাগরিক ঐক্য।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সংস্কারের জন্য অনেকগুলো কমিটি গঠন করছে। আমারও সৌভাগ্য হয়েছে নিজেও শ্বেতপত্র কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার। তারপরও কেন এই প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন হলো? আমরা যেভাবে বর্তমান সরকার তথা সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম, আজকে এই মুহূর্তে সেই উচ্ছ্বাস, সেই উৎসাহ অনেক স্তিমিত হয়ে গেছে। এটি একটি অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে। যে সংস্কার কমিটি ও কমিশন হলো, তার সঙ্গে পিছিয়ে থাকা মানুষ, অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের সংযুক্তি যথাযথভাবে ছিল না। শেষ সময়ে এসে দেখলাম সংস্কারের সঙ্গে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ।
দেবপ্রিয় বলেন, ঘরের ভেতরের সম্পদগুলো আমাদের রক্ষা করতে হবে। সরকার আসে, সরকার যায়। জনগণ থাকবে, দেশ থাকবে। এটা মাথায় রেখে আমরা আগামী দিনের জন্য এগোচ্ছি। আমাদের চাহিদা নাগরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কণ্ঠস্বরের সঙ্গে। সে কারণেই সকলকে এক হওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছি। 
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে সবার প্রত্যাশা ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এক বছরে সেই সংস্কার কার্যক্রম কত দূর এগোল? অন্তর্বর্তী সরকার তার অবশিষ্ট সময়ে সংস্কারকে আর কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবে? রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার কতটুকুই-বা প্রতিফলিত হবে? 
এ বিষয়গুলো দেখার জন্য নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ উদ্যোগ শুরু করছে, যার মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর বা অংশগ্রহণ কতটা থাকে, সেটা দেখার চেষ্টা করা হবে।
সেমিনারে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন প্রতিনিধি সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।