ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৭

আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জুলাই ঘোষণা ও মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে দেওয়া সরকারপ্রধানের নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণের পুনরুক্তিকেও স্বাগত জানিয়েছে। তবে কোনও কোনও দল এখনও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে।
রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করবো। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করবো।
গত জুনে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচিত বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতেও সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছিল। এর আগে ঈদের সময় তিনি সবকিছু ঠিকঠাক থাকা স্বাপেক্ষে ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন।
গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুতবপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাই। জুলাই ঘোষণাপত্রের যেসব ঘোষণা তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। 
রাতে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন এটাকে স্বাগত জানাই। এখন নির্বাচন কমিশন কী করে, সেটা তারা কথা বলবেন। তারা সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন। তবে সেটা ডিসেম্বরের আগে বলে মনে হয় না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য— তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন বিষয়ে রাজনৈতিক নির্দেশনার প্রয়োজন ছিল। এখন প্রধান উপদেষ্টার চিঠি গেলে ইসি আশ্বস্ত হবে। তারা বিস্তারিত সূচি সেটা দেবে।  ধারণা করি, ডিসেম্বরের আগে হবে না। তবে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে এতদিন যে রাজনৈতিক দলগুলোতে দ্বিধা, অবিশ্বাস, সন্দেহ ছিল, তা কেটেছে। তার অনেকখানি অবসান ঘটবে।’ সরকারের সঙ্গে মনঃস্তাত্ত্বিক দুরত্ব কমবে বলেও মনে করেন সাইফুল হক।
রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে এবি পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু  বলেন, ‘উনি ওনার কথা রাখছেন।’
ইসলামি গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেছেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। প্রধান উপদেষ্টা আজকে যে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা মনে করি— ইতিবাচক ঘোষণা। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল গুলো মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে দোদুল্যমান অবস্থা ছিল, তার অবসান হবে বলে মনে করি।’
‘এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সহায়ক হবে। এই ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে স্বাগত জানাই। এতদিন দেশের মানুষের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সংশয় ছিল— নির্বাচন হবে কিনা, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই অবস্থার অবসান ঘটলো।’
সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতি আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারবে। অতীতের মতো ভোট যেন এদিক-ওদিক না হয়, মানুষ যেন তাদের নিজের ভোট নিজে দিতে পারে, সেটা সরকার এবং প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।’
নির্বাচনের জন্য নতুন নিরপেক্ষ সরকার চায় সিপিবি
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বলতে পারি— প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নির্বাচনের ব্যাপারে একধাপ অগ্রগতি। তবে আমরা মনে করি, এখনও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে। তিনি যদি এটি নির্বাচন কমিশনকে বললে যথাযথ হতো।’
একইসঙ্গে সরকারকে জানাতে চাই, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কারণ দেশবাসী মনে করে, ইতোমধ্যে এই সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। ফলে, কবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে, সেটিও জানতে চাই।’ বলে উল্লেখ করেন প্রিন্স।
জামায়াত প্রতিক্রিয়া জানাবে কাল, জাসদ চায় আগে ইনুর মুক্তি
এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন,  ‘প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ ও জুলাই সনদ ঘোষণার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী বুধবার (৬ আগস্ট) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান মতামত জানাবেন। আজকে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারছি না।’
জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন  বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত পুরনো, আগে দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর মুক্তি, তারপর নির্বাচন। আর এখনও নির্বাচন নিয়ে ভাবার সময় আসেনি।’
ঘোষণার প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ আছে
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই মানসিকভাবে ধরে নিয়েছিলাম, তিনি আগেও বলেছিলেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করবেন। সে হিসেবে ঠিকই আছে। তবে ঘোষণার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক দলের মধ্যে ক্ষোভ আছে। তিনি এক দলের একনেতার সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যান্য দলের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি।’