সার্ভেয়ার মজিবুর রহমান ও আমানাতুল মাওলা। কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায়। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে ভুয়া ভূমি মালিকের জাল কাগজকে সঠিক বলে প্রতিবেদন দেন তারা। তাদের প্রতিবেদনের জেরে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় ২০১৯ সালে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতি মামলা করে দুদক। পরে দুই আসামি কারাভোগ করেন। ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারে দৌড়ঝাঁপ করছেন তারা।
সরকারি চাকরিজীবী হয়েও তারা বনে গেছেন রাজনৈতিক ব্যক্তি। জেলা প্রশাসনের দুষ্টচক্রকে ম্যানেজ করে মামলা থেকে রেহাই পেতে তোড়জোড় করছেন সার্ভেয়াররা। এরই মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের নাম প্রত্যাহার করার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর পিপির মতামতও আদায় করে নিয়েছেন। তা জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির দপ্তরে।
এ প্রসঙ্গে মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, এ-সংক্রান্ত কোনো বিষয় আমার দপ্তরে নেই। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হককে একাধিকবার ফোন এবং তাঁর অফিসে গেলেও দেখা মেলেনি।
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মফিজুল হক ভুঁইয়া বলেন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক শত শত মামলা প্রত্যাহারে মতামত দিয়েছি। দুদকের মামলার আসামি সার্ভেয়ারদের মামলায় মতামত দিয়েছি কিনা, রেকর্ড দেখে বলতে হবে। তারা রাজনৈতিক হয়রানির শিকার না হলে যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে তাদের আবেদন বাদ পড়বে।
সার্ভেয়ার মজিবুর রহমান বলেন, ভুলে প্রকৃত ভূমি মালিকের অর্থ অন্যজন নিয়ে যায়। দুর্নীতি মামলা করার পর টাকা নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা সরকারি কোষাগারে ফেরতও দিয়েছেন। আমরা কোনো অর্থ আত্মসাৎ করিনি। তাই মামলাটি হয়রানিমূলক হওয়ায় প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করেছি। আমাদের পক্ষে মহানগর পিপিও মতামত দিয়েছেন।
অপর সার্ভেয়ার আমানাতুল মাওলা বলেন, আমাদের প্রতিবেদনে ভুল ছিল। প্রতারক চক্র এটি কাজে লাগিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছিল। প্রতারক চক্রের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগসাজশ ছিল না।
আইনজীবী চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, মিলেমিশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে আসামিরা অপরাধ করেছেন। দুদকের মামলা বিচারাধীন। এ অবস্থায় দুর্নীতি মামলার আসামিদের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় নাম প্রত্যাহারের যে আয়োজন, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
এখন যে অবস্থায় আছে মামলা
ভুয়া ভূমি মালিক সেজে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুই সার্ভেয়ারসহ ১৫ আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ দুদকের প্রতিবেদন ও সুপারিশ খারিজ করে দিয়ে দুই সার্ভেয়ারসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন।
মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান বলে জানান দুদক পিপি মাহমুদুল হক মাহমুদ।