ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। শনিবার সাড়ে ১১টার দিকে গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়। লংমার্চের মিছিলটি গুলিস্তান মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে সচিবালয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয় পুলিশ।
এ সময় ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগুনোর চেষ্টা করেন। বাধা পেয়ে মিছিল নিয়ে নগর ভবনের সামনে ফিরে আসেন বিক্ষোভকারীরা। ‘আসিফের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই, দিতে হবে’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই’ এমন নানা স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। লংমার্চে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা অংশ নিয়েছেন।
ইশরাককে মেয়র পদে বসাতে শনিবার নগর ভবন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। এরই অংশ হিসেবে সকালে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তার অনুসারীরা। পরে সেখান থেকে লংমার্চ শুরু হয়।
এদিকে আজকের কর্মসূচিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ কর্মচারীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। নগর ভবনের সব গেট বন্ধ করে সকাল থেকে কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা। এতে অচল হয়ে যায় ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয়। ফলে কোনো সেবাপ্রার্থী ও কর্মকর্তা নগর ভবনে প্রবেশ করতে পারেনি।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও ইশরাক হোসেনকে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলেন, জনতার রায়ে নির্বাচিত ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে জনগণের সঙ্গে বেঈমানি করা হচ্ছে। শপথ না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা নাসরিন আক্তার বলেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট পাস হলেও তাঁকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না। অনতিবিলম্বে তাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আমরা সচিবালয় ঘেরাও করতে এসেছি।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থেকে আসা আরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। ময়লা-আর্বজনা ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মেয়র না থাকার কারণে নগরবাসীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। গত মেয়র নির্বাচনে ইশরাক হোসেন বিপুল ভোটে বিজয়ী হলে এই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল স্বৈরাচার সরকার। আমাদের স্পষ্ট দাবি, যদি ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া হয় আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
বংশালের বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, ইশরাক জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা তাকে দ্রুত মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। তার বিষয়টি কতদিন এভাবে আটকে রাখবে? সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, কেন তাকে এখনও শপথ গ্রহণ করানো হচ্ছে না? শপথ যতদিন পড়ানো হবে না, ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। যদি এটা নিয়ে কোনো টালবাহানা হয়, আমরা আরও বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসনেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
পরদিন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, মন্ত্রণালয়ের মতামত দেওয়ার আগেই ইসি ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ করেছে। এরপর ৫ মে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবে কিনা বা অন্য কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবে কিনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে অবগত করার অনুরোধ জানায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে না বলে ১৩ মে স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।