
ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বিদেশি নাগরিক এবং ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ, ২০২৮ সালের অলিম্পিকসহ বড় ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নিতে ইচ্ছুক দর্শকদের ভিসা আবেদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে।
একই সময়ে, বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি নাগরিকদের জন্য নির্দিষ্ট ভিসা (এইচ–১বি) আবেদনে নতুন মানদণ্ড যোগ করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উদ্যোগে যুক্ত মনে করা হবে—বিশেষ করে ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে উগ্রবাদী বক্তব্য দমনে চালু হওয়া কনটেন্ট মডারেশন কার্যক্রমে—তাদের ভিসা বাতিল করা হতে পারে।
এই সপ্তাহে বিশ্বের সব মার্কিন কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো একাধিক গোপন বার্তায়—যা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সংগ্রহ করেছে—স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে “উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ” করতে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের ভিসা আবেদন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে। পাশাপাশি বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে চাওয়া ব্যক্তিদের আবেদনও একই অগ্রাধিকার পাবে।
এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নীতির সর্বশেষ পদক্ষেপ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক আয়োজিত হওয়ায় প্রশাসন চায় যেন বিদেশি দর্শকেরা সহজে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেন। বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানের আগে নীতিগুলো আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
বিদেশিদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ভিসা প্রয়োজন এমন সবাইকে সরাসরি সাক্ষাৎকার ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর ফলে অনেক দূতাবাস ও কনস্যুলেটে বি১ ও বি২ ভিসার সাক্ষাৎকারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা তৈরি হয়েছে, যদিও কর্মীসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
গত মাসে ট্রাম্প “ফিফা পাস” নামে নতুন একটি উদ্যোগের ঘোষণা দেন। এতে বিশ্বকাপ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীরা দ্রুত সাক্ষাৎকারের তারিখ পেতে পারবেন। তবুও তিনি আবেদনকারীদের দ্রুত ভিসা আবেদনে উৎসাহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, বিশ্বকাপের ভিসা চাহিদা সামাল দিতে বিশ্বজুড়ে ৪০০-র বেশি অতিরিক্ত কনস্যুলার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রগামী ভ্রমণকারীরা ৬০ দিনের মধ্যে সাক্ষাৎকারের তারিখ পেতে পারেন—ক্যাবলে এ তথ্যও উল্লেখ ছিল।
এই সপ্তাহের নতুন নির্দেশনায় অলিম্পিকসহ অন্যান্য বড় ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে ইচ্ছুক দর্শকদের জন্য ভিসা সাক্ষাৎকার দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে।
একটি ক্যাবলে বলা হয়েছে, “বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট ইভেন্টে অংশ নিতে যাওয়া দর্শক ও সমর্থকদের জন্য যথেষ্ট সাক্ষাৎকারের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আমেরিকান রি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন সম্পর্কিত আবেদন ছাড়া এগুলোই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।”
অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের তালিকায় আরও আছে: বিদেশি কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তারা, অস্থায়ী কৃষিশ্রমিক, ধর্মীয় কর্মী, চিকিৎসক ও নার্স, এবং যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ শতাংশের কম—সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
ক্যাবলে বলা হয়েছে, “উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আবেদনকারীদের সর্বদা কম অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের তুলনায় আগে বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজন হলে নিম্ন অগ্রাধিকার গোষ্ঠীর সাক্ষাৎকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে উচ্চ অগ্রাধিকার আবেদনকারীদের স্থান দিতে হবে।”
মঙ্গলবার পাঠানো দ্বিতীয় একটি ক্যাবলে এইচ–১বি ভিসা আবেদন যাচাইয়ের নতুন মানদণ্ড ব্যাখ্যা করা হয়। সেখানে কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়—যেসব ব্যক্তি অনলাইনে বা অন্যত্র আমেরিকান নাগরিকদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ বা দমনে “দায়ী বা সম্পৃক্ত” থাকতে পারেন, তাদের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে।
এই ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এসব ভিসার জন্য বছরে ১ লাখ ডলার করে নতুন ফি আরোপ করা হবে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেলে ভিসা বাতিল হতে পারে। এর মধ্যে পড়ে—মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশ্বিক কনটেন্ট মডারেশন নীতি গ্রহণ, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের সেন্সরশিপ নির্দেশনা মেনে চলা, কিংবা বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আমেরিকান নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকার দেওয়া।
এ ধরনের প্রমাণ আবেদনকারীর জীবনবৃত্তান্ত, কর্মতালিকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল বা পোস্ট, এবং প্রকাশ্য বক্তব্য বা লেখালেখি থেকে পাওয়া যেতে পারে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এসব যাচাই দ্রুত করার জন্য অতিরিক্ত সরঞ্জামও তৈরি করা হচ্ছে।
ক্যাবলে বলা হয়েছে, সব ভিসা আবেদনকারীই এই মানদণ্ডের আওতায় থাকবেন। তবে এইচ–১বি আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে যাচাই আরও কঠোর হবে, কারণ অনেকেই প্রযুক্তি খাতে—বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা আর্থিক সেবাখাতে—কর্মরত এবং বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে জড়িত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, “তাদের কর্মজীবন বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখতে হবে, যাতে বক্তব্য দমনে কোনো অংশগ্রহণ থাকলে তা শনাক্ত করা যায়। এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে আবেদনকারীর ভিসা অযোগ্যতা নির্ধারণের পদক্ষেপ নিতে হবে।”