
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে শরণার্থী গ্রহণের নিম্নতম সীমা নির্ধারণ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত এক নথিতে বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার শরণার্থী নেওয়া হবে, যা মার্কিন ও বৈশ্বিক শরণার্থী নীতি পুনর্গঠন প্রচেষ্টার প্রাথমিক ধাপ।
নতুন ঘোষণায় ট্রাম্প উল্লেখ করেন, নিজ দেশে বেআইনি বা অন্যায় বৈষম্যের শিকার ব্যক্তিদের বিবেচনায় আনা হবে।
৩০ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত বার্ষিক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু আফ্রিকানার জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত দেশটিতে আফ্রিকানাররা বর্ণভিত্তিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অবশ্য তার অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার অস্বীকার করেছে।
তবে এপ্রিলের এক অভ্যন্তরীণ নথিতে মার্কিন কর্মকর্তারা প্রস্তাব দেন, ব্যাপক অভিবাসনের বিরোধিতা বা জনতুষ্টিতাবাদী রাজনৈতিক দলের সমর্থনের কারণে বৈষম্যের শিকার হলে, ইউরোপীয়দের মধ্য থেকেও নিপীড়িতদের শরণার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পরই যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে ট্রাম্প প্রশাসন। তখন বলা হয়েছিল, মার্কিন স্বার্থে উপযোগী প্রমাণিত হলে প্রক্রিয়াটি পুনরায় চালু করা হবে। এর কয়েক সপ্তাহ পরই তিনি আফ্রিকানারদের প্রবেশের উদ্যোগ নিলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, সেপ্টেম্বরে শুরুর দিকে মাত্র ১৩৮ জন দক্ষিণ আফ্রিকান যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলেন।
তবে মার্কিন আইন অনুযায়ী, শরণার্থী কোটা নির্ধারণের আগে কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে কোনও বৈঠক হয়নি। কংগ্রেস সদস্য জেমি রাসকিন ও সিনেটর ডিক ডারবিনসহ ডেমোক্র্যাট নেতারা বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, অবৈধ এবং অকার্যকর।
নিজেদের কাজের সাফাই গেয়ে প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ১ অক্টোবর শুরু হওয়া সরকারি কার্যক্রম স্থগিতে (শাটডাউন) আলোচনা প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। আলোচনার আগে কোনও শরণার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
গত সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অন্যান্য দেশকেও আশ্রয় নীতিমালা কঠোর করার বৈশ্বিক প্রচারে যোগ দিতে আহ্বান জানান, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অভিবাসন কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
বিভিন্ন নথি যাচাই করে রয়টার্স জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের শেষ অর্থবছরে শরণার্থী প্রবেশের সীমা ছিল প্রায় এক লাখ।
টেন্ট পার্টনারশিপ ফর রিফিউজি’র সিইও গিডিওন মাল্টজ বলেন, শরণার্থীরা মার্কিন শ্রমঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, এবং এই কর্মসূচি আমেরিকার জন্য অত্যন্ত সুফল বয়ে এনেছে। আজ এটিকে ধ্বংস করাতে মার্কিন স্বার্থই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।