যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী ব্যয় সংক্রান্ত বিল অনুমোদনে ব্যর্থতার কারণে ১ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম বন্ধ বা ‘শাটডাউন’ শুরু হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে দীর্ঘ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এই অচলাবস্থাকে আগের তুলনায় আরও তিক্ত করেছে।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় সংক্রান্ত বিল নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এর ফলে সরকারি সেবা স্থগিত হয়েছে এবং প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মচারী বিনা বেতনে ছুটিতে যেতে পারেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা মনে করছেন, এবারের শাটডাউন তাদের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার একটি সুযোগ। তারা বিশেষভাবে স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি নবায়ন এবং এসিএ প্রিমিয়াম ট্যাক্স ক্রেডিট সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। ডেমোক্র্যাটদের সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলেন, দলটি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত।
সিনেট নেতা চাক শুমার এবং হাউসের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট হাকিম জেফ্রিস আগেরবারের তুলনায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য সমর্থকদের জন্য দৃঢ় নেতৃত্ব প্রদর্শন করা এবং স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি পুনঃনবায়নের দাবিতে চাপ সৃষ্টি করা।
রিপাবলিকান ও ট্রাম্প প্রশাসন শাটডাউনকে কেন্দ্র করে ফেডারেল কর্মী সংখ্যা কমানোর সুযোগ দেখছেন। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, সরকার বন্ধ থাকার ঘটনা তাদের জন্য ‘অভূতপূর্ব সুযোগ’ এনে দিয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অচলাবস্থা চলতে থাকলে প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা চালু রাখতে বড় পরিসরে ছাঁটাই করা হবে, যা সরকারের ব্যয় কমানোর পাশাপাশি অপচয় ও জালিয়াতি কমানোর প্রয়াস।
রাসেল ভট ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটি ও শিকাগোসহ ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় তহবিল স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা আলোচনায় আন্তরিক নন এবং রাজনৈতিক নিরাপত্তার জন্য সমঝোতা ঠেকিয়ে রেখেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি সপ্তাহে অচলাবস্থা মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রায় ০.২ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস করতে পারে। এর ফলে পরিবেশ অনুমোদন, পেটেন্ট অনুমোদন, ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ এবং অন্যান্য সরকারি কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। তবে অস্থায়ী হলেও শাটডাউন শেষ হলে বেশিরভাগ কার্যক্রম পুনরুদ্ধার হয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি ট্রাম্প প্রশাসন বড় পরিসরে কর্মী ছাঁটাই করে, তাহলে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। এবারের শাটডাউনকে আগেরবারের তুলনায় আলাদা করেছে রাজনৈতিক আস্থার ঘাটতি, দুই দলের মধ্যে তিক্ততা এবং প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ।
শাটডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবন, ওয়াশিংটন মন্যুমেন্ট এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান। সাধারণ জনগণ এবং ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকায় দৈনন্দিন জীবন ও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।