যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে মন্তব্য করার পর দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাশিয়ার কুখ্যাত পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ডেড হ্যান্ড’-এর প্রসঙ্গ তোলেন। এরপর ট্রাম্প কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ব যেন আবার একটি স্নায়ুযুদ্ধের আবহে প্রবেশ করছে।
‘ডেড হ্যান্ড’ নামের যে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কার তৈরি একটি ভয়ংকর স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা রুশ শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম। মেদভেদেভের হুঁশিয়ারির পর ট্রাম্পের এই সাবমেরিন মোতায়েন নতুন করে পারমাণবিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিয়েছে।
যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি, তবে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চপদস্থ সদস্য ভিক্টর ভদোলেৎস্কি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি দুটি সাবমেরিন মোতায়েন করেছেন, আমরা ইতোমধ্যে বিশটিরও বেশি মোতায়েন করেছি। যেসব অঞ্চল আপনি টার্গেট করেছেন, সেগুলো অনেক আগেই আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।’ তার মতে, রাশিয়ার সাবমেরিনগুলোর কাছে মার্কিন সাবমেরিন বড়জোর ‘লোহার বাক্স’।
এই প্রেক্ষাপটে দুই পরাশক্তির সাবমেরিন বহরের সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর হাতে বর্তমানে ১৪টি ওহাইও-শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলো প্রতিটি ২০টি ট্রাইডেন্ট টু-ডি৫ ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। এগুলো ১৫ বছর পর্যন্ত কোনো বড় মেরামত ছাড়াই চালানো যায়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ভার্জিনিয়া, সিওল্ফ ও লস অ্যাঞ্জেলেস-শ্রেণির মোট ৫১টি আক্রমণাত্মক সাবমেরিন, যেগুলো টমাহক, হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র ও এমকে-৪৮ টর্পেডো বহনে সক্ষম।
অন্যদিকে রাশিয়ার হাতে আছে বোয়েরি ও ডেল্টা ফোর-শ্রেণির ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন। বোয়েরি-শ্রেণির প্রতিটি সাবমেরিনে ১৬টি বুলাভা ক্ষেপণাস্ত্র, টর্পেডো লঞ্চার ও সাবমেরিন-বিধ্বংসী রকেট থাকে। ডেল্টা ফোর-শ্রেণির সাবমেরিনগুলো তুলনামূলক পুরনো হলেও এখনও সক্রিয় এবং প্রতিটি ১৬টি করে সিনেভা ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে।
রাশিয়ার আক্রমণাত্মক সাবমেরিন বহরে রয়েছে ইয়াসেন, আকুলা, কিলো ও বেলগোরোদ-শ্রেণির সাবমেরিন। ইয়াসেন-শ্রেণির সাবমেরিনগুলো দূরপাল্লার কালিবর ও অনিক্স ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে, এবং উচ্চ গতির জন্য এগুলো শনাক্ত করা কঠিন। আকুলা-শ্রেণির সাবমেরিন, যেগুলোকে ‘শার্ক’ নামেও ডাকা হয়, সোভিয়েত আমলে তৈরি হলেও আজও ভয়ংকর কার্যকর এবং এগুলো থেকে অনিক্স ও গ্রানিট ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। বেলগোরোদ-শ্রেণির এক বিশেষ সাবমেরিনে রয়েছে ‘পসেইডন’ নামের ড্রোন-টর্পেডো, যা পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দুই দেশের পারমাণবিক সাবমেরিন শক্তি এখনো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও ধ্বংসাত্মক। অথচ সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও হুমকির মধ্যে দিয়ে তারা যেন আবার স্নায়ুযুদ্ধের পথে হাঁটছে। এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরেকটি ভয়াবহ অধ্যায়ের মুখোমুখি হতে পারে।