মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তরের (বিএলএস) প্রধান ডা. এরিকা ম্যাকএন্টারফারকে পদচ্যুত করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি চাকরির প্রকৃত অবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে ভুল তথ্য দিয়েছেন।
ট্রাম্প নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ এক ঘোষণায় বলেন, ডা. এরিকা "ভুয়া চাকরির সংখ্যা বানিয়েছেন", যা তিনি তাঁর দপ্তর থেকে প্রকাশ করেছেন। এই বরখাস্তের ঘটনা ঘটে এমন এক সময়ে, যখন সদ্য প্রকাশিত জুলাই মাসের প্রতিবেদনে দেখা যায়—যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন চাকরির সৃষ্টি হয়েছে। মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে মোট ১ লাখ ৬ হাজার চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যা সাধারণত এক মাসের শ্রমবাজার টিকিয়ে রাখার জন্যই প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের মতে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ শ্রমবাজার ধরে রাখতে প্রতিমাসে অন্তত ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের দরকার হয়। এর চেয়ে কম হওয়া মানে হলো—বেকারত্বের হার বাড়তে পারে, অর্থনীতির গতিও মন্থর হতে পারে।
অর্থনৈতিক গবেষক সিমা শাহ বলেন, “চাকরির সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। এর পাশাপাশি গত দুই মাসের তথ্য নতুন করে সংশোধন করে আরও কমিয়ে ধরা হয়েছে, যা শ্রমবাজারের দৃঢ়তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।”
একই মত পোষণ করেছেন গোল্ডম্যান স্যাচস-এর আর্থিক বিশ্লেষক আলেক্সান্দ্রা উইলসন-এলিজোনদো। তিনি লিখেছেন, “শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব এখন মাত্র শুরু হয়েছে, সামনের মাসগুলোতে শ্রমবাজারের দুর্বলতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।”
ট্রাম্প এসব তথ্য সামনে আসার পরপরই দায় চাপান পরিসংখ্যান প্রধান ম্যাকএন্টারফারের ওপর এবং তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করেন। নতুন কমিশনার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন উপ-প্রধান উইলিয়াম উইয়াত্রস্কি।
লেবার সেক্রেটারি লরি চ্যাভেজ-ডিরেমার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “চাকরির পরিসংখ্যান কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত হওয়া উচিত নয়। সাম্প্রতিক নানা সংশোধন ডা. এরিকার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।”
অন্যদিকে, প্রশাসনের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা এই বরখাস্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সাবেক দুই কমিশনার—বিল বিচ (যিনি ট্রাম্পের সময়ে নিযুক্ত হয়েছিলেন) ও এরিকা গ্রোশেন (যিনি ওবামা সরকারের সময় কাজ করেছেন)—এক বিবৃতিতে বলেন, “ডা. এরিকা কোনো সংখ্যা বানাননি। তাঁর দপ্তরের কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে তা জনসমক্ষে তুলে ধরা। প্রেসিডেন্টের এমন হস্তক্ষেপ সরকারি পরিসংখ্যানের নিরপেক্ষতা নষ্ট করছে।”
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনগণের আস্থা কমিয়ে দেবে। বহু প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী সরকারি তথ্যের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেন। এখন তারা অনিশ্চয়তায় পড়বেন। সাবেক আর্থিক সুরক্ষা দপ্তরের পরিচালক রোহিত চোপড়া বলেন, “সরকারি পরিসংখ্যানের নির্ভরযোগ্যতা নষ্ট হলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে থেকে নির্বাচিত সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, “ভালো চাকরির সুযোগ তৈরির চেষ্টা না করে, প্রেসিডেন্ট এখন দায় চাপাচ্ছেন তথ্যদাতার ওপর।” সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ একনায়কদের মতো আচরণ। স্বাধীন ও পেশাদার লোকজনকেই এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা উচিত।”
তবে ট্রাম্প বলছেন, “আমাদের অর্থনীতি আবার গতিশীল হচ্ছে। বড় এবং সুন্দর একটি আইন পাস হলেই আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষেরা আরও সমৃদ্ধ হবেন।”