পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে

ট্রাম্প
ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৯:৫১
আপডেট  : ৩১ জুলাই ২০২৫, ২০:০৫

পাকিস্তােনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উভয় পক্ষই জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের হার কমবে এবং একই সঙ্গে তারা একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে যেখানে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের তেলের মজুদ উন্নয়নে সহায়তা করবে। খবর রয়টার্সের।
সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছি যার মাধ্যমে পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিশাল তেলের রিজার্ভ উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবে।
এই অংশীদারিত্বের নেতৃত্ব দেবে এমন তেল কোম্পানি নির্বাচন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। তবে তার ওই পোস্টে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে ওই চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ট্রাম্প শুল্ক সংক্রান্ত কোনো চুক্তির কথা উল্লেখ করেননি। তবে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বলেছে যে, বাণিজ্য চুক্তির ফলে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি পণ্য রপ্তানির ওপর পারস্পরিক শুল্ক হ্রাস পাবে। তবে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে সে বিষেয়ে কিছু বলা হয়নি।
এই চুক্তিটি বিশেষ করে জ্বালানি, খনি ও খনিজ পদার্থ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অন্যান্য খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। সে সময় পাকিস্তানের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আলোচনার জন্য ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করা হয়েছিল।
গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে দেখা করার পর দার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান একটি বাণিজ্য চুক্তির খুব কাছাকাছি আছে যা কয়েক দিনের মধ্যেই আসতে পারে।
দার এবং রুবিও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও খনির ক্ষেত্রে বাণিজ্য এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষই বৈঠকের পর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্যান্য পাকিস্তানি কর্মকর্তারাও গত কয়েক সপ্তাহে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেছেন।
ট্রাম্পের অধীনে, ওয়াশিংটন অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করেছে। এগুলোকে তিনি অন্যায্য বাণিজ্য সম্পর্ক বলে অভিহিত করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। অনেক অর্থনীতিবিদ ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির অফিসের ওয়েবসাইট অনুসারে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পণ্য বাণিজ্য ছিল আনুমানিক ৭.৩ বিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের তুলনায় বেশি। ২০২৩ সালে ছিল প্রায় ৬.৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫.২ শতাংশ বেশি।
গত কয়েক বছরে ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে তাদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রভাব মোকাবিলায় এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ওয়াশিংটন পাকিস্তানকে প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র হিসেবে মনোনীত করেছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন এখনও পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করছে, যদিও এর আগে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে শুক্রবার থেকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
পাকিস্তান সম্প্রতি বলেছে যে, তারা যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে ট্রাম্প এবং রুবিওর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেছে।
কয়েক দশক ধরে চলা ভারত-পাকিস্তান বিরোধের সর্বশেষ উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলার মাধ্যমে। ওই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই দায় অস্বীকার করেছে। গত ৭ মে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায় এবং ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষ হয়েছে।