ইসরায়েলের দাবি সত্য নয়, ইরান পরমাণু অস্ত্রের কাছাকাছি ছিল না

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়ন
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৭ জুন ২০২৫, ২১:৪৬

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের দাবি ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছিল, এটি থামাতেই তারা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখনো পারমাণবিক বোমা বানানোর সক্ষমতা অর্জন থেকে অন্তত তিন বছর দূরে।
চারটি স্বতন্ত্র সূত্রের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইরান এখনো সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই। বরং তারা মূলত পারমাণবিক গবেষণা ও জ্বালানিভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে কিছুটা ক্ষতি করলেও তেহরানের মূল ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এখনও অক্ষত রয়ে গেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ফোর্ডোর মতো সুসংরক্ষিত ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানার জন্য ইসরায়েলের পর্যাপ্ত সামর্থ্য নেই—এর জন্য প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বোমা ও বি-২ বোমারু বিমান।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতির সাবেক কূটনীতিক ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, ইসরায়েল এসব স্থাপনা অকার্যকর করতে পারে, তবে পুরোপুরি ধ্বংস করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিকভাবে জড়াতে হবে বা কূটনৈতিকভাবে কোনো সমঝোতা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। তিনি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা এতে জড়িত নই। জড়াতে হতে পারে, তবে এই মুহূর্তে নই। তিনি জি-৭ সম্মেলনে থাকা অবস্থায় বলেন, দেরি হওয়ার আগেই ইসরায়েল ও ইরানের উচিত সংলাপে বসা।
সামরিক প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস নিমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ দ্রুত মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম কয়েকটি নৌবাহিনীর জাহাজ পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তবে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ভিন্ন মূল্যায়নের বিষয়টি নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বহু বছর ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করলেও তথ্য বিশ্লেষণে তারা প্রায়ই ভিন্নমত পোষণ করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড গত মার্চ মাসে কংগ্রেসে বলেছিলেন, আমাদের মূল্যায়নে এখনো মনে হয় না যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই প্রশ্নে চাপের মুখে পড়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফক্স নিউজে বলেন, আমরা যে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছি, তা খুব পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান অস্ত্র-উপযুক্ততার কাছাকাছি ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যেতে পারে। তবে অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি ডেলিভারি সিস্টেম বা বহনের প্রযুক্তি তৈরি করাও দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলি হামলা যদি ইরানকে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে তা হয়তো ইরানকে ভবিষ্যতে অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে—যা এতদিনে তারা নেয়নি। তবে সাম্প্রতিক আঘাতে ইরানের সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত কাঠামো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সূত্র: সিএনএন