নিউইয়র্কে হোম কেয়ার সংকট

সিডিপ্যাপ নিয়ে আইনসভায় আলোচনার উদ্যোগ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৯ মে ২০২৫, ২৩:৩০
আপডেট  : ১০ মে ২০২৫, ০০:০২

নিউইয়র্কের ৯ বিলিয়ন ডলারের হোম কেয়ার কর্মসূচি CDPAP (Consumer Directed Personal Assistance Program)-এ চলমান সংকট নিরসনে বাজেট পাসের পর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা  ভাবছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যনীতি-বিষয়ক আইনপ্রণেতারা। বেতন-সংক্রান্ত সমস্যা, স্বাস্থ্যবিমার জটিলতা এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে হাজারো প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ নিউইয়র্কাররা সেবা হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে Public Partnerships LLC (PPL) নামক একক ব্যবস্থাপনা সংস্থার হাতে সিডিপ্যাপের প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তরের পর থেকেই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্টেট সিনেটের স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ার সিনেটর গুস্তাভো রিভেরা স্পষ্ট ভাষায় একে ‘বোকামিপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং দায় বর্তেছেন গভর্নর ক্যাথি হোকুলের প্রশাসনের ওপর।
রিভেরা বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের ফলে ব্যক্তিগত সহকারীরা বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। কেউ কেউ সেবা বন্ধ করে চলে গেছেন, ফলে ভুক্তভোগী ব্যবহারকারীরা পড়েছেন সংকটে। তিনি জানান, অধিবেশন শেষ হওয়ার আগেই তিনি এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আইন প্রণয়নের চেষ্টা করবেন।
এদিকে স্টেট অ্যাসেম্বলির স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ার অ্যামি পলিন বলেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এটি সাময়িক অসুবিধা। কিন্তু এখন পরিষ্কারÑবহু সমস্যা রয়ে গেছে। আমাদের কিছু না কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি জানান, অ্যাসেম্বলি সদস্যরা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে পিপিএলের ৯ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির তথ্য জানার জন্য FOIL (Freedom of Information Law) আবেদন করেছেন। এর মাধ্যমে আইনসভা সিডিপ্যাপে সংশোধনের সম্ভাবনা খুঁজে দেখবে। একই সঙ্গে তিনি কর্মীদের জন্য বিকল্প স্বাস্থ্যবিমা সুরক্ষার পথ খুঁজে দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আইনি পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে লিগ্যাল এইড সোসাইটিও, যারা চলতি সপ্তাহে পিপিএলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগে বলা হয়, বহু কর্মী বেতন না পেয়ে কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে অসুস্থ ব্যক্তিরা সংকটে পড়ছেন।
অন্যদিকে গভর্নর হোকুলের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই ব্যবস্থাপনাগত পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, আগের ব্যবস্থায় শত শত FI-এর কারণে ব্যাপক অপচয় ও দুর্নীতি হচ্ছিল। নতুন কাঠামো এসব সমস্যার সমাধান করবে এবং প্রোগ্রামটিকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখবে। তাদের মতে, নতুন প্রতিষ্ঠান পিপিএল সম্প্রতি ১ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পে-চেক প্রদান করেছে, যা ৯৯% নিবন্ধিত সহকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে।
তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন কিছু বলছে। স্কোহারি কাউন্টির বাসিন্দা কারেন এলসবেরি জানান, তার ছেলে ও মেয়ে উভয়েই সিডিপ্যাপে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করলেও বেতন পেতে সমস্যার মুখে পড়েছেন। তার ছেলে মাত্র এক সপ্তাহের বেতন পেয়েছেন, ফলে ভাড়া দিতে না পেরে বিকল্প চাকরি খুঁজছেন। এতে মারাত্মক অসুস্থ মেয়েটি সেবাবঞ্চিত হয়ে পড়ছেন।
পিপিএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা দুই হাজারের বেশি গ্রাহক সহায়তাকর্মী নিয়োজিত রেখেছে এবং হেল্পলাইনে গড়ে ১ মিনিটের মধ্যে সাড়া দেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যবহারকারীরা বলছেন, বহু অভিযোগের এখনো সঠিক সমাধান মেলেনি।
স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, অধিকাংশ সমস্যা এখন কয়েক দিনের মধ্যেই সমাধান করা হচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, পুরো বিষয়টি আইনসভায় আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
বর্তমানে বাজেট চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই তা পাস হবে। এরপর রাজ্য আইনসভায় সিডিপ্যাপ-বিষয়ক আলোচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সময় থাকবে প্রায় এক মাস। অন্যদিকে প্রশাসনের মতে, পিপিএলের অধীনে এই রূপান্তর রাজ্য সরকারকে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে। যদিও এর যথার্থতা নিয়ে এখনো প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বিশেষ করে যখন ৬০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী আরও ব্যয়বহুল বিকল্প কেয়ার প্রোগ্রামে চলে যাচ্ছেন।