বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের কাছে মাত্র ১২ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন- গত কয়েদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে বহুল আলোচিত খবর এটা।
যে প্রতিষ্ঠানের এক হাজার কোটি টাকার বেশী স্থায়ী মূলধন, সেই বিসিবি সভাপতি মাত্র ১২ হাজার টাকার ভাড়ায় বাসা ভাড়া করেছেন এবং তিনি সেখানে থাকবেন বলে স্থির করেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটি সাধারন মানুষের মনে দাগ কেটেছে এবং ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
পাশাপাশি ঘটনার সত্যতা নিয়েও জেগেছে প্রশ্ন। অনেকের মনেও প্রশ্ন জেগেছে, সত্যিই কি বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল মিরপুরে ১২ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া করে থাকছেন?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ‘ঘটনা সত্য। বিসিবি সভাপতি এরই মধ্যে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের খুব কাছে এক আত্মীয়ের বাসার পাশে দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন।’
‘আপনি কি সত্যিই মিরপুরে মাত্র ১২ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া করেছেন? বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কাছে এ প্রশ্ন রাখা হলে তিনি সযত্নে-কৌশলে তা এড়িয়ে গেছেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিসিবি সভাপতিকে মুঠোফোনে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘থাক না ওই বাসার কথা। আমি কোথায় থাকলাম, কত টাকায় ভাড়া বাসা নিলাম, এটা কি খুব বড় খবর? এটা নিয়ে কথা নাইবা বলি।’
এটুকু বলে আমিনুল ইসলাম বুলবুল আফসোস, অনুশোচনার স্বরে বলেন, ‘আমার বাসাই শুধু নয়, আমি কবে কোথায় কি দিয়ে নাস্তা করি, সেগুলোও এখন রিপোর্টিং আইটেম হয়ে গেছে। খুব দুঃখজনক।’
বুলবুল আরও বলেন, ‘দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন, উত্তরণে গঠনমূলক সমালোচনা ও ইতিবাচক লিখনি খুব জরুরি। ক্রিকেটারদের ভাল খেলতে খেলতে উইকেটে ওয়েল সেট হয়ে সফট ডিশমিসাল, ভুল শট খেলে আউট হওয়া এবং পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী না খেলে নিজের ইচ্ছেমত ভুল করা নিয়ে লিখালিখি অনেক বেশি প্রয়োজন। আমি কোথায় থাকলাম, কত টাকা ভাড়ায় বাসা নিলাম, এর চেয়ে কোন ব্যাটার কার বলে কি ভুল খেললেন, সেটা ধরিয়ে দেয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাতেই দেশের ক্রিকেটের উন্নতি সাধিত হবে।’
বুলবুল ভাড়া বাসায় ওঠার কথা মুখ ফুটে বলতে না চাইলেও বিসিবির বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন যে, বোর্ড প্রধান ভাড়া বাসা নিয়েছেন এবং সেখানেই উঠেছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে আমিনুল ইসলাম বুলবুল হঠাৎ কেন মিরপুরে বাসা নিলেন? এ প্রশ্নকারীদের জন্য বলা, বুলবুল পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়ার ছেলে। গেন্ডারিয়া হাই স্কুলের অতি নিকটেই নিজ বাসভবনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়কের। জাতীয় দলে নাম লিখেছেন, ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি ও ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ খেলেছেন ওই গেন্ডারিয়া বাসায় থেকেই।
কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় আগে বর্তমান বিসিবি প্রধানের সেই পৈত্রিক বাড়ি বিক্রি করা হয়ে গেছে। বলে রাখা ভাল, তার আগেই তিনি অস্টেলিয়া পাড়ি জমান।
২০০৬-২০০৭ সালে দেশ ছাড়া বুলবুল মাঝে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কোচিং করাতে এসেছিলেন। তার কোচিংয়ে আবাহনী লিগ চ্যাম্পিয়নও হয়। তারপর আইসিসিতে চাকুরি নিয়ে স্ত্রী সন্তানসহ স্বপরিবারে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
এ দীর্ঘ সময় দেশে না থাকায় খুব স্বাভাবিকভাবেই তার নিজের বাসা নেই ঢাকায়। গেন্ডারিয়ায় পৈত্রিক বাড়ি বিক্রির পর তার অন্য ভাইয়েরা একেকজন একেক জায়গায় থাকেন। গত কয়েক বছরে বুলবুল যতবার ঢাকায় এসেছেন, প্রায় প্রতিবার তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম শফিকের উত্তরা বাসায় উঠেছেন।
এবারও দেশে এসে তাই করেছিলেন। তারপর কয়েকদিন হোটেল সোনারগাঁওয়ে ছিলেন। এরপর বিসিবি কার্যালয়ের কাছে মিরপুরেই বাসা খুঁজে নিয়েছেন। যাতে বিসিবিতে খুব সহজে আসা-যাওয়া করতে পারেন এবং বেশি বেশি সময় দিতে পারেন।
প্রায় দেড়যুগ দেশের বাইরে থাকায় বর্তমান প্রজন্মের আমিনুল ইসলাম বুলবুল সম্পর্কে ধারনা খুব কম। তাকে খুব কাছ থেকে চেনা সবাই জানেন, ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত বুলবুল। খুব দামি পোশাক, আর বিলাসবহুল জীবন যাপনে কখনোই অভ্যস্ত নন তিনি।
যেহেতু তার স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি করেন এবং ২ ছেলেও সেখানেই পড়ালেখা করছে। তার একার জন্য ১২ হাজার টাকায় ২ রুমের বাসাকেই শ্রেয় মনে করেছেন বুলবুল। ব্যাপারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সাড়া জাগানো ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হলেও বুলবুলের ব্যক্তি জীবনের সাথে সেটাই যে মানানসই! কারন তিনি বরাবরই সাধারণ চলাফেরায় অভ্যস্ত।