আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে অবনমন হবে, আগে থেকে জানতো বিসিবি!

স্পোর্টস ডেস্ক
  ০৬ মে ২০২৫, ২২:২৭

সবার জানা আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে অবনমন ঘটেছে বাংলাদেশের। লাল সবুজ জার্সিধারীরা এখন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে ১০ নম্বরে নেমে গেছে।
প্রিয় জাতীয় দলের এ অবনমনে হতাশ বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা। ভক্ত, সমর্থক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ, বোদ্ধারা কারণ খোঁজায় ব্যস্ত। সবার একটাই প্রশ্ন, টেস্ট-ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি- এই তিন ফরম্যাটের মধ্যে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ভালো খেলে।
এই ফরম্যাটে টাইগারদের ট্র্যাক রেকর্ডও ভালো। কিন্তু এক-দুই বছর ধরেই টিম বাংলাদেশের ওয়ানডে পারফরম্যান্স দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এক সময় ৫০ ওভারের ফরম্যাটে টাইগাররা যেমন দ্যুতি দেখাতেন, সময়ের প্রবাহমানতায় তা দেখাতে পারছেন না এবং পারফরম্যান্সটাও অনুজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সে সঙ্গে দেশ ও দেশের বাইরে সব জায়গায় সাফল্য কমে যাচ্ছিল এবং শেষ পর্যন্ত আইসিসির সর্বশেষ র‌্যাংকিংয়ে নেমে গেলো ১০ নম্বর অবস্থানে।
৫০ ওভারের ক্রিকেটে জাতীয় দলের এ অবনমনকে কীভাবে দেখছে বিসিবি? দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংগঠনটির অনুভূতি কী? বিসিবি কী এ অবনমনের কারণ অনুসন্ধান করে দেখেছে বা দেখবে?
বোর্ড পরিচালক ও জাতীয় পরিচালনা এবং তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে নিয়োজিত ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি তথা বিসিবি আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবনমনে বিস্মিত নন।
ফাহিমের ব্যাখ্যা, ‘আমার মনে হয় কম-বেশি আমরা সবাই অনুমান করতে পারছিলাম যে, এমন একটা কিছু ঘটতে পারে।’
সেটা কেন ও কি কারণে? ক্রিকেট অপারেশরন্স কমিটির প্রধান এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বোঝালেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটের অবনমন, ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি সাধন, ঘরোয়া ক্রিকেটে নানান অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘরোয়া ক্রিকেটের গায়ে নানা কালো দাগ লাগার কারণেই দেশের ক্রিকেট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারই ফসল র‌্যাংকিংয়ে এই অবনতি।’
ফাহিমের ব্যাখ্যা, ‘কিছুটা ধারণা করতে পারছিলাম। ২০১৫ সাল থেকে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আমাদের যে মান ভালো হতে থাকলো ও উন্নতি ঘটতে থাকলো। এর কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে তখন আমরা ভালো কাজ করছিলাম। এরপর ২০১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ পর্যন্ত উন্নতির গ্রাফটা ঠিক ছিল। ওই সময় আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান ও কাঠামোও খারাপ ছিল না।’
‘২০১৫ সালে তামিম, মুশফিক, সাকিব, মাশরাফি ও রিয়াদসহ যে দল ছিল ২০১৮-২০১৯ সালে এসে তার সাথে অনেক যুক্ত হলো। লিটনের মতো ছেলে যুক্ত হলো। তাসকিন যুক্ত হলো। মিরাজের মতো প্রতিভার সংযোগ ঘটলো। তারপর থেকে হিসাব অনুযায়ী আমাদের উন্নতি হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু হলো তার উল্টো।’
‘কারণ, একটাই ঘরোয়া ক্রিকেটের অবনমন। মান, কাঠামোর অবনতি। ঘরোয়া ক্রিকেটের কার্যক্রম এমনভাবে কলুষিত করলাম এবং আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিকে এমনভাবে নিচে নামিয়ে ফেলতে শুরু করলাম, তাতে দেশের ক্রিকেট চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’
‘জাতীয় দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দল হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এর পূর্বশর্ত হলো মানসম্পন্ন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ঘরোয়া ক্রিকেট। তার পরিবর্তে উল্টো মানের অবনতি ঘটলো। অক্রিকেটীয় কার্যক্রম মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। অনিয়ম, অব্যস্থাপনা চরমভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। আমরা অনেক দূরে সরে আসতে থাকলাম। ধীরে ধীরে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট হতে থাকলো কলুষিত। আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিটাই নষ্ট হতে লাগলো।’
‘আমার মনে হয় তারই ধারাবাহিকতার ফসল এই অবনমন। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে আমরা দিনকে দিন খারাপ খেলতে থাকলাম। ২০১৫ থেকে ২০১৮-২০১৯ পর্যন্ত ৫০ ওভারের ফরম্যাটে আমাদের যে ঔজ্জ্বল্য ছিল, যে দাপট দেখিয়েছি, সময় গড়ানোর সাথে সাথে সে ঔজ্জ্বল্য ম্লান হয়েছে। দাপটও গেছে কমে। আমি মনে করি আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে অবনমন তারই ফসল।’