জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মামলার তদন্তে যতো চ্যালেঞ্জ  

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ জুলাই ২০২৫, ১৪:৩৪

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৬০১টি। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মামলার তদন্তে ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব মামলার তদন্ত–তদারকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এসব মামলার প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান চার ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জগুলো হলো বেশির ভাগ শহীদের ময়নাতদন্ত না হওয়ায় লাশ উত্তোলন করা; মেডিকেল প্রতিবেদনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ না থাকা বা মৃত্যুর সঠিক কারণ লেখা না থাকা; এজাহারে ঘটনাস্থলের ভুল বর্ণনা এবং মামলায় অনেক ঢালাও আসামি থাকা। এসব কারণে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারছে না বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।
এর বাইরে ভিডিওর ফরেনসিক প্রতিবেদন একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেটার জন্যও সময় লাগছে। বেওয়ারিশ হিসেবে অনেকের লাশ দাফন করা হয়েছে। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেসব ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় মামলা ও তদন্ত আরেকটা চ্যালেঞ্জ।  
এসব মামলার প্রতিবেদন দিতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। তবে এখনো যে অবস্থায় আছে, তাতে অধিকাংশ মামলাতে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে ও তৎকালীন পরিস্থিতির আলোকে সমস্যাগুলো সমাধানের পথও আছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন ত্রুটি, পদ্ধতিগত জটিলতা ও ঘটনা সম্পর্কে পরিষ্কার চিত্র না পাওয়ায় ৩০ শতাংশ মামলার তদন্তে তেমন অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে। 
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে হওয়া ১ হাজার ৬০১ মামলার মধ্যে ৬৩৭টি হচ্ছে হত্যা মামলা। এসব মামলা বিশেষভাবে তদার কি করছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০টি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে ছিল। পর্যায়ক্রমে এসব মামলার প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এর মধ্যে চলতি জুলাইয়ে ১০টি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হতে পারে, আশা করছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা নিতে ঢাকা জেলার (রাজধানী বাদে) মামলাগুলোর বিষয়ে খোঁজ নেয় প্রথম আলো। সেখানে দেখা যায়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় নির্বিচার গুলি ও হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা ও আহত করার ঘটনায় ঢাকা জেলায় মামলা হয়েছে ১১৪টি। এর মধ্যে ১৫টি হত্যা মামলা। এসব মামলার মধ্যে ৩০টির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত ও প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান বিবেচনা হলো সেটি যেন নিখুঁত, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য হয়। আদালতে বিচার চলাকালে যাতে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’ সঠিক তদন্তে সময় কিছুটা বেশি লাগলেও সত্যিকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তদন্ত যেভাবে
জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ কারণে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। তখন পুরো পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পরে ধীরে ধীরে থানার কার্যক্রম শুরু হলে গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় মামলা হতে থাকে। তবে সে সময় মনোবল হারানো পুলিশের সঠিক তদারকির অভাবে অনেক মামলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অনেক মামলার নেপথ্যে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, পেশাগত ও ব্যবসায়িক বিরোধ, বিদ্বেষের কারণেও অনেককে আসামি করা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। 
মামলায় ঢালাও আসামি করার বিষয়টি এমন পর্যায়ে যায় যে গত বছরের ১৪ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানে এ ধরনের মামলা করার মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হয়রানিমূলকভাবে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে সরকারের উচ্চপর্যায় ও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়।
এ পটভূমিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ঘিরে হওয়া মামলা তদারকে বিশেষ মনিটরিং দল গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। বর্তমানে সারা দেশে ১০টি ‘মেন্টরিং অ্যান্ড মনিটরিং’ দলের মাধ্যমে মামলাগুলো তদারক করা হচ্ছে। এর মধ্যে আট বিভাগে আটটি, রাজধানীতে একটি ও গাজীপুরের জন্য একটি দল করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক প্রতিটি মনিটরিং দল নিয়ে বৈঠকে বসে মামলাগুলো বিশ্লেষণ করছেন। তা ছাড়া ঢালাও বা হয়রানিমূলক আসামি করার বিষয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) সমন্বয়ে এবং মহানগরের ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনারের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটি তদন্তে অগ্রগতির বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণ করছে। এতে বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত মামলা তদারকির দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন ঘটনাস্থল, কীভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিহত হলেন, সুনির্দিষ্টভাবে কারা আক্রমণ বা গুলি করেছিল—এসব বিষয় খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। এ জন্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি, ভিডিওসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরও সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর ফুটেজ আলাদা করে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়েছে। পাশাপাশি সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, মৃত্যুসনদসহ এ–সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গত বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত হতাহত ব্যক্তিদের অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একধরনের দ্বিধা, ভীতি কাজ করেছিল। অনেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিতে নিতে মারা যান। তখনকার বাস্তবতায় তাড়াহুড়ো করে লাশ দাফনের ঘটনাও ঘটেছে। ময়নাতদন্তের বিষয়ে সরকারেরও অনাগ্রহ ছিল। মৃত ব্যক্তির আঙুলের ছাপ থেকে লাশ চিহ্নিত করার সুযোগ থাকলেও সেটি ঠিকভাবে করা হয়নি। অনেক লাশ চিহ্নিত করা না যাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়েছিল। আবার ৫ আগস্টের পর এসব ঘটনায় মামলা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে অনেককে আসামি করা বা মামলা–বাণিজ্যের চেষ্টা হয়েছে। শুরুর দিকে এটি প্রতিরোধ করা যায়নি। ফলে মামলাগুলোর তদন্ত জটিল হয়ে উঠেছে।
মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, এসব মামলার প্রতিবেদন দিতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। তবে এখনো যে অবস্থায় আছে, তাতে অধিকাংশ মামলাতে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে ও তৎকালীন পরিস্থিতির আলোকে সমস্যাগুলো সমাধানের পথও আছে।
প্রতিবেদন দিতে ‘বাধা’ কোথায়
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, বেশির ভাগ মামলা হয়েছে গত বছরের ১৯ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্টের হতাহতের ঘটনায়। এর মধ্যে ১৯ জুলাই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিহত হয়েছেন দেড় শর বেশি মানুষ। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং এর আগের দিন ৪ আগস্ট ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনের ওই চরম পর্যায়ে মরদেহগুলো কোথায় যাচ্ছে, কোথায় দাফন করা হচ্ছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় কে কীভাবে মারা গেছেন, সেসব তথ্য পুরোপুরি সংরক্ষণ করেনি হাসপাতাল, পুলিশ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ। 
১ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা গ্রহণে এবং চিকিৎসকদের চিকিৎসায় বাধা দেয়। নিহত ব্যক্তিদের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করতে কিংবা প্রতিবেদনে মৃত্যুর সঠিক কারণ উল্লেখ করতেও বাধা দেয়, ভিন্ন কারণ লিখতে বাধ্য করে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্দোলন চলাকালে জুলাই-আগস্টে লাশের ময়নাতদন্ত থেকে দাফন পর্যন্ত পদে পদে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মামলার তদন্তে। এ জন্য যেসব লাশের ময়নাতদন্ত হয়নি, আদালতের অনুমতি নিয়ে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য পরিবার লাশ তোলায় সম্মতি দেয়নি। সে ক্ষেত্রে যিনি বা যাঁরা দাফনের আগে লাশ গোসল করিয়েছেন বা দেখেছেন, তাঁদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষ হলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, হাসপাতালের ছাড়পত্র, ভিডিওর ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য কোথাও বিকল্প উপায়ে ঘটনার প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। আবার যেসব ক্ষেত্রে তদন্তসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলোর জন্যও অপেক্ষা করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্টের পর করা অন্তত ৩৫০টি মামলার আসামি শেখ হাসিনা। তাঁর চার নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮৪টি মামলা। মামলা রয়েছে সাবেক ৩২৮ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। তবে এসব ব্যক্তির বেশির ভাগই পলাতক বা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা অনেক মামলারই আসামি। এ ধরনের আসামিদের বিরুদ্ধে সব মামলায় তথ্য–উপাত্ত, সাক্ষ্য–প্রমাণসহ বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হাজির করা তদন্তকারীদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো মামলায় এ ধরনের আসামিদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের প্রয়োজনীয় সব উপাদান হাজির করা না গেলে, সে ক্ষেত্রে কী হবে, সেটা নিয়েও তদন্তকারীদের দুশ্চিন্তা রয়েছে। 
যার যায় সেই বোঝে কী গিয়েছে! সন্তান হত্যার এক বছর হতে চলল, অথচ বিচারে সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি নেই।’ ছেলে হত্যার বিচার পাবেন কি না, তা নিয়ে এখন ‘সন্দিহান’ উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের বিচারের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, তারা তা রাখতে পারেনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত হত্যা মামলা হয়েছে ৬৩৭টি। এ অবস্থায় বাকি হত্যার ঘটনাগুলোর বিচারের কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্দোলনে শহীদ ব্যক্তিদের কিছু পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে আগ্রহী নন। অনেক শহীদের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। আবার গেজেটে থাকা নামগুলোর কয়েকটির বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এসব কারণে হত্যা মামলার সংখ্যা কম। তবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হলে এবং শহীদের পরিচয় পাওয়া গেলে পুলিশের পক্ষ থেকেও মামলা করা হতে পারে।
শহীদদের স্বজনেরা তাঁদের প্রিয়জন হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনেও জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি ও বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে।
সন্তান হত্যার বিচারের অগ্রগতি নিয়ে হতাশার কথাই জানালেন জুলাই শহীদ ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যার যায় সেই বোঝে কী গিয়েছে! সন্তান হত্যার এক বছর হতে চলল, অথচ বিচারে সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি নেই।’ ছেলে হত্যার বিচার পাবেন কি না, তা নিয়ে এখন ‘সন্দিহান’ উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের বিচারের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, তারা তা রাখতে পারেনি।’
সূত্র: প্রথম আলো