৪০ বছরে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ

শওগাত আলী সাগর
ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৯:৪৩

কানাডাভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘নতুন দেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। দেশজুড়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে, তা অমূলক নয় বরং একেবারেই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত।
সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মাসুদ কামালের ইউটিউব চ্যানেল ‘অন্য মঞ্চ’-এ এক টক শোতে এসব কথা বলেন তিনি।
সাগর বলেন, ‌'আমাদের রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করছেন, তাদের মাঝে এই পরিস্থিতি নিয়ে আদৌ উদ্বেগ আছে কি না, তা নিয়েই এখন সন্দেহ জাগে। শুরু থেকেই আমরা শুনেছি কেউ কেউ বলেছেন, ট্রাম্পের ট্যারিফ আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ আনবে। কিন্তু সম্ভাবনা মানেই সুযোগ নয়, সেই সুযোগ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি তো আমাদের নিতে হতো।'
তিনি আরও বলেন, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত। ৮০ শতাংশ রপ্তানি নির্ভরশীল এই শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি যুক্ত। এর মানে, কোটি মানুষের জীবিকা এখন ঝুঁকিতে।
আলোচনার এক পর্যায়ে শওগাত আলী সাগর বলেন, 'আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার তৃতীয় রাউন্ড ২৯ জুলাই নির্ধারিত হলেও সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ আগস্ট। মাসের শেষ দিনে এসে আমরা আলোচনায় বসছি, অর্থাৎ পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পর আমাদের টনক নড়ছে।'
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'কমার্স অ্যাডভাইজার এক রকম বলছেন, সচিব আরেক রকম বলছেন, কেউ জানে না বৈঠক হবে অনলাইনে না সরাসরি। প্রস্তুতির এই অভাব আমাদের দুর্বল অবস্থান তুলে ধরছে।'
সাগর বলেন, 'গত এক বছরে বহু গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি হস্তক্ষেপে, হামলা বা ভাঙচুরের মাধ্যমে বহু শ্রমিক বেকার হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নতুন করে ২৭ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। স্থানীয় হিসাবে এই সংখ্যা ৫০-৬০ লাখের কাছাকাছি।'
“এখনো বলা হচ্ছে, অন্তত ১০ লাখ শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। যার মানে, ১০ লাখ পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি দুর্বল, রপ্তানি খাত সংকুচিত, অর্থনীতি স্থবিরতার দিকে। এর ওপর যুক্ত হয়েছে ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কের হুমকি— যা দেশের অর্থনীতিতে একপ্রকার হাতুড়ি আঘাত।”
সাগর বলেন, 'ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ ১৫০টি দেশের ওপর হলেও যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনাম এরই মধ্যে সফলভাবে আলোচনা করে ছাড় পেয়েছে। অথচ আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না,  কে আলোচনায় যাবে, কিভাবে যাবে, আদৌ গুরুত্ব দিচ্ছি কি না।'
তিনি বলেন, 'ভিয়েতনাম মার্কিন বাজারে গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ শেয়ার ধরে রেখেছে। সেখানে তাদের উপর ১৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলেও আমরা হয়তো ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে হতে পারে। তাহলে প্রতিযোগিতায় আমরা কোথায় দাঁড়াব?'
'ঘোষণা আসার পরপরই ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতারা ট্রাম্পকে ফোন করে আলোচনার উদ্যোগ নেন। তাদের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নেগোসিয়েশন টিম গঠন করে, থিঙ্ক ট্যাংক, প্রাইভেট সেক্টর, আমেরিকায় থাকা লবিস্টদের সঙ্গে আলোচনা করে। আর আমরা কী করেছি? প্রথমে একজন নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে পাঠিয়ে দিই, যার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার সম্পর্কই নেই।'
সাগর বলেন, আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো টিম ঘোষণা করিনি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও স্পষ্ট করিনি— কে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা করবে। এই উদাসীনতা ও অনাগ্রহ থেকেই বোঝা যায়, সরকার বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।'
সাগর মন্তব্য করেন, “এটা কেবল কোনো ব্যবসায়ী নেতার উদ্বেগ নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকট। এ কে আজাদের মতো শীর্ষ রপ্তানিকারক যখন বলেন, ‘৪০ বছরে এমন অবস্থা দেখিনি’, তখন তা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এটা গোটা দেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন।'