৯টি বৈজ্ঞানিক উপায় স্মৃতিশক্তি করবে উন্নত

লাইফস্টাইল ডেস্ক
  ২৭ জুন ২০২৫, ২৩:২৩

চাবি কোথায় রেখেছেন মনে নেই? ফোনটা পাঁচ মিনিট আগেও হাতে ছিল—এখন খুঁজে পাচ্ছেন না? এইসব মুহূর্তে আমরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে ভাবি, "আমার স্মৃতিশক্তি বুঝি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে!" কিন্তু চিন্তার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি স্মৃতি হারানো নয়, বরং মনোযোগ হারানোর ফল।
ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মস্তিষ্ক ও বার্ধক্য গবেষক ড. জেনিফার হেইজ বলছেন, ‘মানুষের মন প্রাকৃতিকভাবেই ঘোরাফেরা করে। সেই মনোচঞ্চলতা আমাদের শেখা ও মনে রাখার ক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটায়।’
তবে আশার কথা হলো, আপনি যদি স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে চান, তাহলে কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কৌশল রপ্ত করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হবে। নিচে এমন ৯টি কৌশল তুলে ধরা হলো, যা নিয়মিত চর্চা করলে আপনিও পেতে পারেন 'হাতির মতো' স্মৃতি।

১. মাইনোমনিক পদ্ধতি ব্যবহার করুন
নতুন তথ্য মনে রাখার অন্যতম কার্যকর কৌশল হলো মাইনোমনিক বা স্মরণ-সহায়ক পদ্ধতি। যেমন—আপনি বাজারে আপেল, স্ট্রবেরি আর দুধ কিনতে যাবেন। এই তিনটি জিনিস ASM বলে মনে রাখুন। আবার ‘ROY G. BIV’ নামটি ব্যবহার করে যেমন রঙধনুর সাতটি রঙ মনে রাখা যায়।

২. হাতে লিখুন
গবেষণায় দেখা গেছে, যা কিছু আপনি হাতে লেখেন, তা বেশি দিন মনে থাকে। কম্পিউটার বা ফোনে টাইপ করার চেয়ে কলম দিয়ে কাগজে লিখলে স্মৃতিতে বেশি প্রভাব পড়ে। ২০২১ সালের এক গবেষণা বলছে, হাতের মুভমেন্ট ব্রেইনের বিশেষ অংশকে সক্রিয় করে, যা শেখার প্রক্রিয়াকে জোরদার করে।

৩. প্রতিটি জিনিসের নির্দিষ্ট জায়গা রাখুন
চাবি, ওয়ালেট, রিমোট বা মোবাইল—এই জিনিসগুলো ঘন ঘন হারান? প্রতিটি জিনিসের নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করুন। যেমন, চাবি সবসময় দরজার পাশে রাখা ছোট খোপে রাখবেন। অভ্যাস তৈরি হলে মস্তিষ্ক নিজেই সেই তথ্য মনে রাখবে।

৪. উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
চিন্তা-উদ্বেগ স্মৃতির বড় শত্রু। গবেষকরা বলছেন, উদ্বেগ মস্তিষ্কের 'প্রসেসিং পাওয়ার' অনেকটাই খেয়ে ফেলে। আপনি তখন নতুন তথ্য গ্রহণ বা পুরনো তথ্য স্মরণ করতে ব্যর্থ হন। ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন বা জার্নালিং এসব অভ্যাস উদ্বেগ কমিয়ে মনকে প্রশান্ত করে, যা স্মৃতিকে উন্নত করে।

৫. নতুন শখ শুরু করুন
মাটিতে হাত লাগান, পুঁতি গাঁথুন বা বুনন করুন—এই ধরনের মোটরিক (শরীরসঞ্চালনমূলক) শখ মনকে প্রশান্ত করে, মনোযোগ বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাগান করা বৃদ্ধদের ব্রেইনে নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টরের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা স্মৃতির জন্য সহায়ক।

৬. স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করুন
অন্যকে সাহায্য করার মধ্যেও লুকিয়ে আছে নিজের উপকার। ২০২১ সালের নিউজিল্যান্ডের এক গবেষণা বলছে, নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকা মানুষের কার্যকর মেমরি উন্নত হয়। পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও পাওয়া যায়।

৭. শব্দখেলা ও পাজল খেলুন
ক্রসওয়ার্ড, শব্দ-পাজল বা ধাঁধা আপনার মস্তিষ্ককে সচল রাখে। হার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, প্রতিদিন পাজল খেলা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কিছু ওষুধের মতোই কার্যকর। প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন—ফল পাবেন দীর্ঘমেয়াদে।

৮. হাঁটার অভ্যাস গড়ুন
শারীরিক ব্যায়াম, বিশেষ করে হাঁটা, ব্রেইনে রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সক্রিয় রাখে। Mayo Clinic জানায়, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে, আর মেমরিও ঝকঝকে হয়।

৯. মনোযোগ দিন
সবচেয়ে সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—মনোযোগ! যেকোনো তথ্য যখন মনোযোগ দিয়ে গ্রহণ করা হয়, তখন তা সহজে স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মনোযোগ দিলে মস্তিষ্ক তথ্যকে এমনভাবে কোড করে, যাতে তা দীর্ঘদিন মনে থাকে।

মনে রাখুন:
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে মনে হলেই আতঙ্কিত হবেন না। বরং একটু ধৈর্য ধরে উপরোক্ত ৯টি উপায় অনুশীলন করুন। মনোযোগ, অভ্যাস আর নতুন কিছু শেখার আগ্রহ থাকলে, আপনার স্মৃতিও ফিরবে নিজের ছন্দে—আর হারিয়ে যাওয়া চাবি, ফোন বা নামও আর হারাবে না।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট