নজিরবিহীন দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরে এই সপ্তাহেই ব্রিটেন যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই সফরের সময় প্রযুক্তি ও বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানির ওপর চুক্তি ঘোষণা করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। চুক্তির লক্ষ্য দুই দেশের ট্রিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা জোরদার করা, যাতে আটলান্টিকের উভয় প্রান্তের ব্যবসা ও ভোক্তারা উপকৃত হন। যুক্তরাজ্য বহুল প্রচারিত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে ইস্পাত শুল্ক চূড়ান্ত করার আশা করছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাবেন এবং তিন দিন অবস্থান করবেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সফরের সময় ব্রিটিশ রাজকীয় আড়ম্বরের প্রদর্শনী উপভোগ করবেন ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া। এর মধ্যে রয়েছে ঘোড়ার গাড়িতে শোভাযাত্রা, রাষ্ট্রীয় ভোজ, সামরিক বিমানের উড়ান প্রদর্শনী এবং বন্দুকের সম্মাননা।
ব্রিটিশ সরকার আশা করছে, রাজপরিবারের ‘সফট পাওয়ার’ ট্রাম্পকে আকৃষ্ট করবে। কারণ লন্ডন ওয়াশিংটনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও জ্বালানির ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক খুঁজছে, যেখানে ইতিমধ্যেই একটি অনুকূল শুল্ক চুক্তি নিশ্চিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে তার কান্ট্রি রেসিডেন্স চেকার্সে আতিথ্য দেবেন। যেখানে তারা ইউক্রেন ইস্যুসহ আরও ঘনিষ্ঠভাবে একসঙ্গে কাজ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন এবং ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের জন্য প্রতিশ্রুত কম শুল্ক চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে অগ্রসর হবেন।
স্টারমারের এক মুখপাত্র বলেছেন, সফরের সময় একটি বিশ্বমানের প্রযুক্তি অংশীদারিত্ব এবং একটি বড় বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করবেন ট্রাম্প।
স্টারমারের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী। এই সপ্তাহে আমরা সেই সম্পর্কে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছি।
স্টারমারই ছিলেন প্রথম বিশ্বনেতা যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈশ্বিক শুল্ক হ্রাসের অর্থনৈতিক চুক্তিতে সম্মত হন।
সেই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, তারা গাড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে। যদিও গাড়ির শুল্ক সংক্রান্ত বিস্তারিত জুনে চূড়ান্ত হয়েছে, তবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
ব্রিটিশ বাণিজ্য মন্ত্রী পিটার কাইল রবিবার বিবিসিকে বলেন, ইস্পাতের ক্ষেত্রে আমরা যত দ্রুত সম্ভব একটি ঘোষণা নিশ্চিত করব।
ট্রাম্পের আগমনের আগে, শনিবার ব্রিটেন পেপ্যাল, ব্যাংক অব আমেরিকা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১.২৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে সূত্র অনুযায়ী, এনভিডিয়া ও ওপেনএআই প্রযুক্তি চুক্তির অংশ হিসেবে বিনিয়োগের ঘোষণা দেবে।
স্টারমারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সোমবার ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল ট্রাম্পের সফরের বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকবে।
তবে আলোচনাগুলো জটিল হবে, কারণ মার্কিন দণ্ডপ্রাপ্ত মৃত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে গত সপ্তাহে স্টারমার ব্রিটেনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ম্যান্ডেলসনকে বরখাস্ত করেছেন। স্টারমারের জন্য এটি গভীর বিব্রতকর পরিস্থিতি। কারণ তিনি মাত্র এক বছর আগে ম্যান্ডেলসনকে ব্রিটেনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত কূটনৈতিক পদে নিয়োগ করেছিলেন।
এটি হবে গত দুই মাসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় ব্রিটেন সফর। এর আগে জুলাইয়ের শেষ দিকে তিনি স্কটল্যান্ডে তার গলফ কোর্সে সময় কাটিয়েছিলেন।