ইউক্রেইনের গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত সাত লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন রাশিয়া-নিযুক্ত কর্মকর্তারা।
এর একদিন পর জরুরি বিভাগের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত লাইনগুলো মেরামত করে সরবরাহ আবার স্বাভাবিক করে তোলেন বলে জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবারের এই হামলায় ইউক্রেইনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিজিয়া ও খেরসন অঞ্চলে ইউক্রেইনের চালানো অন্যতম বড় হামলা হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
টেলিগ্রাম অ্যাপে রাশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, “বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের সমন্বিত কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ। এখন সব গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।”
রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিবেশী অঞ্চলের বিদ্যুৎ কর্মীরাও মেরামত কাজে সহযোগিতা করেছে।
রাশিয়ার জাপোরিজিয়া ও খেরসন অঞ্চলের পুরো মালিকানা দাবি করে আসছে। ইতোমধ্যে তারা এ দুই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। বাকি যে অল্প কিছু অংশ আছে তাও দখল করতে চাইছে তারা।
রাশিয়া দাবি করে, ইউক্রেইনের এসব অঞ্চল তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই অঞ্চলের স্থানীয় রুশ ও রুশভাষী জনগণের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় দখল করেছে। ইউক্রেইন একে ‘ঔপনিবেশিক দখল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং কূটনীতি ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এলাকা পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেছে।
তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি আলোচনার কয়েক ঘণ্টা পর এই ড্রোন হামলা চালানো হয়। শান্তি আলোচনায় রাশিয়া বলেছে, যদি কিইভ বিশাল নতুন ভূখণ্ড ছেড়ে দেয় ও তাদের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত রাখার প্রস্তাব মেনে নেয় শুধুমাত্র তাহলে মস্কো এ যুদ্ধ শেষ করতে সম্মত হবে।
রাশিয়ার নিযুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাপোরিজিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে কিন্তু পরিস্থিতি ‘কঠিন’।
রাশিয়া ইউরোপের বৃহত্তম এ পারমাণবিক স্থাপনাটি ২০২২ সালে দখলে নেয়।
ইউক্রেইনের সুমি অঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেইনের সুমি অঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছবি: রয়টার্স
দুই অঞ্চলে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়
জাপোরিজিয়ার রাশিয়া-নিযুক্ত গভর্নর ইয়েভগেনি বালিৎসকি জানান, ইউক্রেইনের গোলাবর্ষণে উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় ৫০০টি বসতির ৬ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
প্রতিবেশী খেরসন অঞ্চলেও প্রায় একই অবস্থা ছিল। সেখানে রাশিয়া-নিযুক্ত গভর্নর ভ্লাদিমির সালদো জানান, হামলায় দুটি সাবস্টেশন ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে রুশ নিয়ন্ত্রিত ১৫০টি শহর ও গ্রামে এক লাখের বেশি বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিলেন।
এদিকে ইউক্রেইনের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সুমি শহরে রুশ বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় জরুরি বিভাগ।
“রুশ বাহিনী বর্বরভাবে সুমি শহরে হামলা চালিয়েছে—এলোমেলোভাবে রকেট ছুড়েছে সাধারণ বাসিন্দাদের দিকে,” এক্স-এ লিখেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, হামলায় এক আবাসিক ভবন, তিনটি ব্যক্তিগত বাড়ি, একটি গুদাম ও একটি হাসপাতাল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুমি অঞ্চলের সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, আহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
এই হামলার অভিযোগের বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উভয় দেশই সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের সিংহভাগ ইউক্রেইনীয়।