পাকিস্তানের আকাশ বন্ধ

প্রতিবছর এয়ার ইন্ডিয়ার ৬শ' মিলিয়ন ডলার ক্ষতির শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০২ মে ২০২৫, ১১:৩৬

ভারতীয় বিমান কম্পানির জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আকাশপথ বন্ধ করায় অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের আশঙ্কা করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। এমনটি জানিয়ে এক চিঠিতে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে ক্ষতিপূরণমূলক ভর্তুকি দেওয়ার অনুরোধ করেছে বিমান কম্পানিটি।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। চিঠির বরাতে রয়টার্স বলেছে, যদি পাকিস্তানের আকাশপথ নিষেধাজ্ঞা আগামী এক বছর স্থায়ী হয়, তাহলে বিকল্প রুটে বিমান পরিচালনার কারণে দীর্ঘ ফ্লাইট সময় এবং বাড়তি জ্বালানি ব্যয়ের ফলে এই অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।
এয়ার ইন্ডিয়া সতর্ক করে বলেছে, ‘এই দীর্ঘ ফ্লাইট সময় যাত্রীদের ওপরও প্রভাব ফেলবে।’
ফলে, প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলে এয়ার ইন্ডিয়া ৫৯১ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে।
এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার কারণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায়। দিল্লি দাবি করেছে, হামলার পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা মহলের হাত রয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা ২৩ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে না।
ফলে, এয়ার ইন্ডিয়া ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে ক্ষতিপূরণমূলক ভর্তুকি দেওয়ার জন্য। চিঠিতে তারা বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লাইটের জন্য ভর্তুকি একটি ভালো, যাচাইযোগ্য এবং ন্যায্য উপায়। পরিস্থিতি উন্নত হলে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা যাবে।’
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘আকাশসীমা বন্ধ থাকার কারণে জ্বালানি খরচ, অতিরিক্ত ক্রু ব্যবস্থাপনা—সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর।’
এখনও পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া বা বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়াও অন্য সংস্থাগুলোর ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। তবে টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে, কারণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই সংস্থাটি ৫২০ মিলিয়ন ডলার নিট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ইন্ডিগোও জানিয়েছে, তাদের কিছু ফ্লাইটে প্রভাব পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে আজারবাইজানের বাকু গামী ফ্লাইটটি ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় নিয়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩৮ মিনিট বেশি।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এয়ার ইন্ডিয়া, কারণ আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করে এমন ফ্লাইটের সংখ্যাই তাদের বেশি। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি-মধ্যপ্রাচ্য রুটের ফ্লাইটগুলো এখন কমপক্ষে এক ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে এবং ফলে বেশি জ্বালানি প্রয়োজন হচ্ছে।
এপ্রিল মাসে শুধুমাত্র দিল্লি থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকামুখী প্রায় ১,২০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং ইন্ডিগো।
রয়টার্স জানিয়েছে, সরকার বিমান সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব কমানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনা করছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাগামী দীর্ঘ ফ্লাইটে অতিরিক্ত পাইলট অনুমোদন, কর ছাড় এবং ব্যতিক্রমীভাবে পাকিস্তানের মিত্র চীনের সঙ্গে ওভারফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের জন্য আলোচনার বিষয়ও রয়েছে।