জর্ডানের রাজধানী আম্মানে একটি অনানুষ্ঠানিক শরণার্থী শিবির থেকে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে জোর করে উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন—এমনটাই অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এইচআরডব্লিউ জানায়, আম্মানের আল-মাহাত্তা এলাকায় গত বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে গ্রেটার আম্মান মিউনিসিপ্যালিটি (জিএএম) কর্তৃপক্ষ অন্তত ২৫টি বাড়ি ও দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। সেখানে ১০১ জনের মতো মানুষ বাস করছিলেন।
সংস্থাটির অভিযোগ, এসব মানুষকে পর্যাপ্ত সময়, তথ্য বা বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ করা হয়েছে। মূলত শহর পুনর্গঠনের প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই উচ্ছেদ চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
‘দখল’ যুক্তি ও মানবিক সংকট
জর্ডান সরকার আল-মাহাত্তা শিবিরকে আনুষ্ঠানিক শরণার্থী শিবির হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তবে এখানে ১৯৪৮ সালের নাকবার সময় বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় আট হাজার ফিলিস্তিনি পরিবারের বাস।
আম্মান শহরের চার বছরের ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান’-এ (২০২৬ সাল পর্যন্ত) ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন, সবুজ এলাকা বৃদ্ধি এবং অনানুষ্ঠানিক বসতি থেকে জনসংখ্যার চাপ কমানোর কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আলঘাদ।
তবে অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, তাদের মাত্র দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেওয়া হয় অস্পষ্ট মৌখিক প্রতিশ্রুতি—প্রতি বর্গমিটার ৮০ জর্ডান দিনার (প্রায় ১১৩ ডলার) দেওয়ার কথা বলা হলেও সময়সূচি বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি।
এইচআরডব্লিউ-এর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের উপপরিচালক অ্যাডাম কুগল বলেন, আবাসন ছাড়াই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করলে তারা কার্যত সাহায্যের জন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা পায় না। যথাযথ সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া এমন উচ্ছেদ মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
‘উচ্ছেদ নয়, অনুদান’
আম্মানের মেয়র ইউসুফ আল-শাওয়ারবেহ বলেছেন, উচ্ছেদ করা ব্যক্তিরা সরকারি জমি দখল করে বসবাস করছিলেন। তাই তাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার নেই। তবে তাদের ‘অনুদান’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে আল-মাহাত্তা থেকে উচ্ছেদের একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওমর রাজ্জাজ স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের উচ্ছেদে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
সূত্র: আল-জাজিরা