জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হয়ে গেল মিলনমেলা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৫৭

লস এঞ্জেলসের বলিউড রেস্টুরেন্টের উজ্জ্বল সন্ধ্যায়, ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার, যেন সিলেটের আত্মার এক মিলনমেলা বসেছিল। প্রবাসের ব্যস্ততা পেছনে ফেলে, ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশের নিচে হাসি ও আলাপের মধ্য দিয়ে সেদিন এক আবেগঘন আয়োজন সম্পন্ন হয় — প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন -কে সংবর্ধনা জানায় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালিফোর্নিয়া।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ মুনিম, আর সুচারু সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লায়েক আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গীতিকার, মিশিগান প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা সভাপতি হেলাল উদদীন রানা, প্রথম আলোর ক্যালিফোর্নিয়া প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম, এবং সময় টিভির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ও লস এঞ্জেলস প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লস্কর আল মামুন। অংশ নেন স্থানীয় সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠক, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাঙালি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন। বিনয়ের সঙ্গে তিনি বলেন,
“সংবর্ধনা বা সম্মাননা প্রাপ্তির চেয়ে আমি বরাবরই কাছের মানুষদের পাশে থাকতে পছন্দ করি। আমি একজন সাধারণ মানুষ — সাধারণের কাতারেই থাকতে চাই।”
তিনি তাঁর কৈশোর ও প্রাক-যৌবনের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন। সিলেটের বাঘা গ্রাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা, এবং সিলেট অঞ্চলের আন্দোলন-সংগঠনের দিনগুলো স্মরণ করে বলেন, “সেই সময়ের বন্ধু, সহযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল এক আত্মিক বন্ধনে। আজ সেই সম্পর্ক প্রবাসে এসেও জীবন্ত আছে — এই আমার প্রাপ্তি।”
তিনি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার প্রকাশনা নিয়ে বিস্তারিত বলেন — “প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা শুধু একটি সংবাদমাধ্যম নয়, এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কণ্ঠস্বর। আমরা এই মহাদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের কথা, সাফল্য, সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও মননের প্রতিফলন ঘটাতে চাই। সাংবাদিকতা আমাদের কাছে দায়িত্ব, আর পাঠকের ভালোবাসাই আমাদের শক্তি।”
ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন তাঁর বক্তৃতায় প্রবাসের সামাজিক যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক চেতনা এবং প্রজন্মান্তরের সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে বলেন, “প্রবাসে থেকেও আমরা আমাদের মূলকে ভুলে যেতে পারি না। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের মতো সংগঠনগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — আমরা সিলেটের, আমরা বাংলাদেশের। আমাদের এই সম্পর্কই প্রবাসের শক্তি।”
তিনি বিশেষভাবে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। সংগঠনের কবরস্থান প্রকল্প, শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান, এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজগুলোকে তিনি বলেন, “প্রবাসের অগ্রদূতের উদাহরণ।” “জীবনে অর্থ নয়, সম্পর্ক ও সৌজন্যবোধই আসল সম্পদ,” — এই উক্তিতে তিনি উপস্থিত সবাইকে আবেগে আপ্লুত করেন।
সাংবাদিক ও গীতিকার হেলাল উদদীন রানা বলেন, “ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন এমন একজন মানুষ, যিনি আলোকিত হন না — আলোকিত করেন। সাংবাদিকতায় তাঁর সততা ও সংগঠনে তাঁর প্রজ্ঞা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।” তিনি মিশিগান প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা সময়ের স্মৃতি টেনে বলেন, “আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন সাংবাদিকতার সততা ও নীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রবাসেও তিনি সেই আলোর দিশা দেখিয়ে চলেছেন।”
রোজিনা ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “প্রথম আলোর হয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, অনেক পুরস্কারও। কিন্তু সবচেয়ে বড় অর্জন হলো মানুষের আস্থা। প্রবাসের সংবাদ পরিবেশনে ইব্রাহীম ভাই আমাদের সবার প্রেরণা।” লস্কর আল মামুন বলেন, “ইব্রাহীম চৌধুরী শুধু সম্পাদক নন, তিনি এক নীরব প্রেরণার উৎস। সাংবাদিকতার কঠিন বাস্তবতায়ও তিনি মানুষের গল্পকে ভালোবাসার সঙ্গে বলেন।”
সৈয়দ নাসির উদ্দিন জেবুল স্মৃতিচারণ করে বলেন, “স্কুলজীবনে খোকন ভাইয়ের সঙ্গে সামাজিক কাজেই প্রথম যুক্ত হয়েছিলাম। তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি নেতৃত্ব কীভাবে মানুষকে এক করে।” লায়েক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলেন, “আমরা গর্বিত — আমাদের নিজ এলাকার সন্তান ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন আজ উত্তর আমেরিকার সাংবাদিকতায় সম্মানিত নাম। তাঁকে সংবর্ধিত করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।”
সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম কিবরিয়া আন্দোলনের রাজপথের স্লোগানময় দিনগুলোর স্মৃতি টেনে বলেন,
“আজ সেই কণ্ঠ, সেই উচ্ছ্বাস — প্রবাসেও টিকে আছে। এক সময় যাঁর পাশে দাঁড়িয়েছি, আজ তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে গর্বিত।” নজরুল আলম বলেন, “আমরা সাংবাদিকদের কাছ থেকে সত্য ও নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা করি। খোকন ভাই সেই মানদণ্ডে অনন্য।”
ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, “জালালাবাদ এসোসিয়েশন শুধু একটি সংগঠন নয় — এটি প্রবাসী সিলেটিদের সাংস্কৃতিক বন্ধন, প্রজন্মের সংযোগ ও মানবিকতার প্রতীক। সংগঠনটির নিজস্ব কবরস্থান প্রকল্প, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও পরিবার সম্মাননা, এবং সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। প্রবাসে থেকেও এ সংগঠন বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছে।”
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে মোহাম্মদ মুনিম বলেন, “আমরা সবাই এক পরিবারের অংশ। সংগঠন চালানো মানে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা। আজকের এই অনুষ্ঠান সেই ভালোবাসার উদযাপন।” তিনি ইব্রাহীম চৌধুরী খোকনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনার উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রেরণা। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব — এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আজকের আয়োজন।”
সংবর্ধনা শেষে সংগঠনের কর্মকর্তারা ইব্রাহীম চৌধুরী খোকনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। পরবর্তীতে এক মনোরম নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে মধ্যরাতের পর। আলাপ, সেলফি, স্মৃতি আর সিলেটি আতিথেয়তায় ভরা সেই রাত ছিল এক অমলিন সাক্ষাৎ — যেখানে প্রবাসে থেকেও মানুষ নিজের মাটি, নিজের মানুষের প্রতি ভালোবাসার বন্ধনে আবারও এক হয়ে উঠেছিল।
উপস্থিত ছিলেন ও আলাপচারিতায় অংশ নেনঃ মোহাম্মদ মুনিম, লায়েক আহমেদ, সৈয়দ নাসির উদ্দিন, ইয়ামিন চৌধুরী, গালাম রব্বানী চৌধুরী, মতলব আহমেদ, শামসুদ্দিন মানিক, শামসুল আরিফিন বেলাল, বদরুল আলম মাসুদ, মোহাম্মদ হাকিম, মুশফিকুর চৌধুরী, মুয়াজ্জেম আহমেদ, মো. মাইনুল হোসেন, মুয়াজ্জেম চৌধুরী, দিলওয়ার হোসেন, মো. সুমন আহমেদ, মুর্শেদ আহমেদ চৌধুরী, জামশেদ আসলাম, লুৎফর হোসেন, মোহাম্মদ বশির, মোহাম্মদ হাসিব, মিজানুর রহমান সাঈদ, নাহিদুল উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল ফারহাদ, মোহাম্মদ লুৎফুল রহমান, এম. এ. হামিদ খোকন, এম. এ. হোসেন (রানা), লস্কর আল মামুন, গোলাম কিবরিয়া, আবুল হাসনাত রফিক, নাজমুল আলম প্রমুখ।
লস এঞ্জেলসের সেই সন্ধ্যা যেন স্মরণ করিয়ে দিল — সময় বদলায়, স্থান বদলায়, কিন্তু সম্পর্ক ও ভালোবাসা থেকে যায় অমলিন। ইব্রাহীম চৌধুরী খোকনের কথায়, “নিস্বার্থ ভালোবাসার চেয়ে জীবনে কিছুই বড় হতে পারে না।”