পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃত্যু ৩১

করতোয়াপাড়ে স্বজনদের আহাজারি
পঞ্চগড় সংবাদদাতা
  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৬

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে তীর্থযাত্রার নৌকা ডুবে অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ১২ জন, পুরুষ চারজন ও শিশু আটজন। গতকাল রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটের কাছে এ ঘটনা ঘটে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ওই নৌকায় শতাধিক যাত্রী ছিলেন; তারা স্থানীয় একটি মন্দিরের পূজায় যাচ্ছিলেন।
নৌকাডুবির ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন শোক জানিয়েছেন।


নিহতদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- পলি রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (৩), খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), তারা রানী (২৪), শোনেকা রানী (৬০), ফাল্গুনী রানী (৫৫), প্রমিলা রানী (৭০), ধনো বালা (৪৭), সুমিত্রা রানী (৫৭), সফলতা রানী (৪০), সিমলা রানী (৩৫) হাসান আলী, (৫২), উশোশী (১), তনুশ্রী (১) ও শ্রেয়শী (১)। এদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩০ জন নিখোঁজ ছিল। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আহত ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জন বোদা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চারজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী জানান, মহালয়া উপলক্ষে গতকাল বোদা উপজেলার শ্রীশ্রী মহাশক্তি বোদেশ্বরী মন্দিরে পূজা ছিল। ওই পূজায় যোগ দিতে গতকাল দুপুরে বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার হাজারো মানুষ করতোয়ার পাড়ে জড়ো হন। তাদের পারপারে চারটি নৌকা ছিল। এর মধ্যে একটি নৌকা অতিরিক্ত যাত্রীর ভারে করতোয়ায় ডুবে যায়।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নৌকাটি নদীর তীর থেকে খুব একটা দূরে ছিল না। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ডুবে যায়। এর পর আশপাশের মানুষজন উদ্ধার অভিযানে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘাট থেকে নৌকাটি কিছুদূর যাওয়ার পর দুলতে থাকে। এ সময় মাঝি নৌকাটি তীরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীদের অনেকেই সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে অনেক নারী ও শিশু ডুবে যান।
মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শরীফুল ইসলাম বলেন, ওই নৌকায় বেশি ছিলেন মাড়েয়া, চন্দনবাড়ি, সাকোয়া ও ব্যাঙহারি এলাকার মানুষ। এসব এলাকার অবস্থান করতোয়ার এক পাড়ে। অপর পাড়ে রয়েছে মন্দিরটি।
স্থানীয়ারা জানান, করতোয়ায় সারাবছরই পানি থাকে। সেতু না থাকায় নদী পারাপারের জন্য নৌকা ও ট্রলারই মূল ভরসা। ওই রুটে সাধারণত একটি নৌকা চলাচল করে। তবে তীর্থযাত্রার জন্য আরও তিনটি নৌকা নামানো হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পঞ্চগড় স্টেশনের সহকারী উপপরিচালক শেখ মাহবুবুল ইসলাম গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছি। আর স্বজনদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম গতকাল রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণেই নৌকাটি ডুবে যায়। আমাদের উদ্ধারকাজ ৫ ঘণ্টা ধরে চলছে। যে কোনো তথ্য জানতে ও জানাতে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তারা তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। জেলা পুলিশের উদ্যোগেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, নিহতদের সৎকারে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। চিকিৎসার জন্য আহতরা পাবেন ১০ হাজার টাকা করে।
নৌকাডুবির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।