ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ

আজ ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে বসবেন জাহাঙ্গীর কবির নানক
নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪৮
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য

ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে বেশ অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সংগঠনটির সভাপতি নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়ে দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। অন্যদিকে জয়-লেখকের বিপরীতে ক্ষুব্ধ নেতারা প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায়ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ। এই নেতাদের ভাষ্য, ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগ সরাসরি দেখভাল করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে দলের চারজন নেতাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে যতসব অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের না দিয়ে কেন বাইরে এসে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পেছনে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতার বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মনে করেন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির অনেক নেতা অভিযোগ তুলেছেন, কমিটি বাণিজ্য, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করা ও দায়িত্ব পালনে স্বেচ্ছাচারিতা করছেন জয়-লেখক। অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের তো দূরের কথা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরও গুরুত্ব দেন জয়-লেখক।
শোভন-রাব্বানীর পর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। পরে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জয়-লেখককে ভারমুক্ত করা হয়। ভারমুক্ত হওয়ার পর ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে।
এদিকে জয়-লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগের চিঠিতে বর্তমান কমিটির ৭৫ জন স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা গেছে। ক্ষুব্ধ নেতাদের স্বাক্ষর করা চিঠি গতকাল শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দিতে যান ক্ষুব্ধ অর্ধশতাধিক নেতা। তবে দলের দপ্তর থেকে এই চিঠি গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান ক্ষুব্ধ নেতারা। পরে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আজ ১১ সেপ্টেম্বর ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে বসবেন বলে জানান। এমন প্রতিশ্রুতিতে ক্ষুব্ধ নেতারা ফিরে আসেন। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে গণহারে পদত্যাগ করবেন বলে জানান ক্ষুব্ধ নেতারা।
ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে নানক ছাড়াও আরও তিন নেতা আছেন। তারা হলেনÑ আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক।
আওয়ামী লীগের ক্ষুব্ধ নেতাদের ভাষ্য, ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন। এখানে কেউ ভুল করলে তাকে জবাবদিহির আওতায় আনার সুযোগ আছে। নেত্রী এদের সরাসরি দেখভালের জন্য চার নেতাকে দায়িত্বও দিয়েছেন। এরপরও কেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বাইরে এসে বা গণমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন? ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটিতে আসার মোহে কেউ কেউ ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে কেউ এগিয়ে আসত না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকে উসকানি দিয়ে তাদের নিজেদের লোকজনকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
দলের আরেক নেতা বলেন, ছাত্রলীগের দ্বিধা-বিভক্তি সৃষ্টি করা এবং সেই বিভক্তির খবর বাইরে নিয়ে আসাটা খুবই দুঃখজনক। যারা এই কাজে উৎসাহিত করেছেন, তারা মূলত দলের ক্ষতি করছেন।
বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কামাল খান, যিনি বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নেমেছেন। জানতে চাইলে আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ তা গ্রহণ করেনি। পরে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাই আমাদের ১১ সেপ্টেম্বর ডেকেছেন। তার সঙ্গে আলোচনার করে বাদবাকি সিদ্ধান্ত নেব।’
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির আরেক সহসভাপতি আরিফ বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি বর্তমান কমিটি ভেঙে আগামী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা। কারণ বর্তমান কমিটি বিধি মেনে সংগঠন চালাচ্ছে না। পদ-বাণিজ্য, সিদ্ধান্ত প্রদানে স্বেচ্ছাচারিতাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে জয়-লেখকের বিরুদ্ধে।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ছাত্রলীগের দুই নেতা জানান, ১১ সেপ্টেম্বর নানক ভাইয়ের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে তারা গণহারে পদত্যাগ করবেন।
অভিযোগের বিষয়ে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘অভিযোগ আনার অধিকার সবারই আছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত কিনা তা বিবেচ্য বিষয়। আমার ধারণা, শেষ পর্যন্ত এগুলো অভিযোগ বলেই বিবেচিত হবে। আর সম্মেলন কবে হবে এটার এখতিয়ার আমাদের অভিভাবক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। তিনি যখন যা বলেন, আমরা তা করতে বাধ্য।’
সংগঠনের সমস্যা অভ্যন্তরীণ মিটিংয়ে বলার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগে দ্বিধা-বিভক্তি কথাটা সত্য নয়। ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধই আছে এবং থাকবে। কেউ হয়তো কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, সেটা আনতেই পারেন, এটা তার অধিকার। কিন্তু সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে না বলে গণমাধ্যমে বা বাইরে এসে অভিযোগ দিলে কিছু তো প্রশ্ন থেকেই যায়।’
ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ নেতাদের কেউ উসকে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। তবে আমি বিশ^াস করি ছাত্রলীগ সব সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, এগিয়ে যাবে।’