
কাজ করে দিতে পাকা কলা উৎকোচ নেওয়ার কথা স্বীকার করায় যশোর জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেনকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে দুদক কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এ নির্দেশনা দেন।
অবশ্য অভিযোগকারী রুস্তম আলীর দাবি, তার কাছ থেকে পাকা কলা ছাড়াও ১০ হাজার টাকা ঘুস গ্রহণ করেন ওই কর্মকর্তা। এরপর আরও ৬ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন; যা না দেওয়ায় জেলা পরিষদের জমির ডিসিআর অন্যকে দিয়ে দেন আলমগীর হোসেন।
এছাড়া যশোর সদরের ভায়না গ্রামের আরজিনা খাতুন অভিযোগ করেন, মেয়ে খাদিজা খাতুনের চাকরি দেবেন বলে যশোর সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী সালমা খাতুন তিন লাখ টাকা নেন।
এরপর তার মেয়ে খাদিজা খাতুনের নামে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেন সালমা; কিন্তু তিনি এখন টাকা ফেরত চাইলেও দিচ্ছেন না, উল্টো হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। দুদক চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন ভুক্তভোগীকে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন সিভিল সার্জনকেও।
গণশুনানিতে ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রার অফিস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, সওজ, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএডিসি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগসহ ৭৫টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
এ সময় অভিযোগকারীরা বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ চুরি, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, বিআরটিএ কার্যালয়ে ঘুস ছাড়া কাজ না হওয়া—এসব দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
গণশুনানিতে একাধিক ভুক্তভোগী তাদের নির্দিষ্ট অভিযোগ লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন এবং সরাসরি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে বক্তব্য রাখেন। এ সময় অনেকেই বলেন, স্থানীয়ভাবে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি, তাই দুদকের এই গণশুনানি তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করছেন।
অভিযুক্ত দপ্তরগুলোর প্রতিনিধিরা পাল্টা বক্তব্যে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। কেউ কেউ অভিযোগ খণ্ডনে বিভিন্ন নথি ও কাগজপত্র উপস্থাপন করেন।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গণশুনানিতে উত্থাপিত সব অভিযোগ লিখিতভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব অভিযোগের সত্যতা মিলবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুদকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।