মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের (এনসিবি) চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা কাজী ছাব্বীর।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) আয়োজিত মওলানা ভাসানীর কারাবরণ দিবস উপলক্ষে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
কাজী ছাব্বীর বলেন, শাসক ও শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে সংগ্রাম করাই ছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নীতি এবং আদর্শ। মওলানা ভাসানীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেক সত্য কথা পাঠ্যপুস্তকে আজও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ইতিহাসকে গোপন করার মাধ্যমে মওলানা ভাসানীকে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে আড়াল করা হয়েছে। ১৯৫৮ সালে ৭ অক্টোবর তৎকালীন জেনারেল আইয়ুব সামরিক শাসন জারি করলে তারই প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী দেশব্যাপী আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। মওলানা ভাসানীকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী প্রায় ৪ বছর ১০ মাস কারাগারে বন্দি করে রাখে।
তিনি বলেন, একথা অনস্বীকার্য যে পাকিস্তান শাসকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সেই লক্ষ্যে স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন মওলানা ভাসানীই। দুঃখের বিষয় যে স্বাধীনতার ইতিহাসে মওলানা ভাসানীর অবদান যথাযথভাবে আজও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এদেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজসহ সবারই উচিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পর মওলানা ভাসানী দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে নেতৃত্ব দেন। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি জোড়াল আহ্বান জানাচ্ছি।
আগামী ১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এনসিবির চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেননি বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ ছিলেন মওলানা ভাসানী। চীনপন্থি রাজনীতিক হওয়ায় দেশপ্রেমিক এই ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে প্রায় গৃহবন্দি করেই রাখা হয়েছিল। বিশেষ করে বামপন্থি কোনো রাজনৈতিক নেতাকে হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি তৎকালীন ভারত সরকার। তবুও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতের অবদানের প্রতি আজও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি।
দলের সভাপতি স্বপন কুমার সাহার সভাপতিত্ব ও মহাসচিব মুনসুর রহমান শেখ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- এনসিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক মিয়া, সেলিম পারভেজ, কবি সানজিদা রসুল ও কবি সৈয়দ তৌফিক কামাল, বাংলাদেশ জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকসেদুর রহমান প্রমুখ।