বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের পর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য রিভার্স সুইং খেলা শুরু করেন বলে মন্তব্য করেছেন আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।সোমবার (১৮ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এর আগে, রোববার পিনাকী ভট্টাচার্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেন। তিনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে দাবি করেছেন, ওই সময় সর্বোচ্চ দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে পিনাকীকে নিয়ে মুখ খোলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিজ বার্ড কলেজের ভিজিটিং অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সামহোয়্যার ইন ব্লগে পিনাকীর একটি লেখা শেয়ার করেন। ব্লগের সেই লেখায় পিনাকী মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখকে প্রতিষ্ঠা করতে নানান তথ্য-উপাত্ত হাজির করেন।
পিনাকীকে নিয়ে ফাহমিদুলের সেই পোস্টটি নিজের ওয়ালে শেয়ার করে সবাইকে পড়ার পরামর্শ দেন সাংবাদিক সায়ের এবং পোস্টের মন্তব্য ঘরে লেখেন, ‘তখন অবশ্য তিনি (পিনাকী) চেতনা পক্ষের লোক ছিলেন, শাহবাগ আন্দোলন অর্গানাইজ করতে এবং বিতর্কিতভাবে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারতে সোচ্চার ছিলেন। অবশ্য তাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার চেতনা লোপ পায় এবং তিনি রিভার্স সুইং খেলা শুরু করেন, মাফটাফ চান, বহু নাটক কইরা দিনে দুপুরে লাফাইতে লাফাইতে দেশ থিক ভারতে ঢুইকা পড়েন, এই আরকি।’
সায়ের তার স্ট্যাটাসের সঙ্গে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়কার পিনাকীর একটি গ্রুপ ছবিও শেয়ার করেন। সেখানে পিনাকীর সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট পরিচিত সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদসহ অন্যদের দেখা গেছে।
১২ বছর আগে সামহোয়্যার ইন ব্লগে কী লিখেছিলেন পিনাকী
ব্লগের সেই লেখায় পিনাকী মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখকে প্রতিষ্ঠা করতে নানান তথ্য-উপাত্ত হাজির করেন। তিনি লেখেন, ‘জামায়াতের পক্ষ থেকে একটা বিতর্ক চালু করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে। এর ফলে তাদের অপরাধ লঘু করে দেখানোর একটা প্রচেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে অনেকে বলার চেষ্টা করেন যে, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ সংখ্যাটা আন্দাজে বলা হয়েছে। এই অভিযোগটা আসে মূলত জামায়াত ঘরানার মানুষদের কাছে থেকে। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো আলোচনায় তারা বৈধতা বের করতে পারে না। কোনো যুক্তিতেই তারা কাউকে কনভিন্স করতে পারেন না। তাই তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে মানুষকে কনফিউজ করে দিতে চায়।
ব্লগে পিনাকী আরও লেখেন: ‘রুমেল তার STATISTICS স্টাটিস্টিক্স অব ডোমিসাইড বইয়ের Statistics Of Pakistan's Democide Estimates, Calculations, And Sources ৮ম চ্যাপ্টারে মুক্তিযুদ্ধে জেলাওয়ারি শহীদের সংখ্যা, পর্যাপ্ত রেফারেন্সসহ গ্রথিত করেছেন। এই ৩০ লাখের বিষয়টা সেখানেই আছে। এই বইটিতে শুধু বাংলাদেশ নয় ভিয়েতনাম যুদ্ধ পর্যন্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক যুদ্ধের পরিসংখ্যান দেওয়া আছে। এবং এই বইটি একটা বিশ্বব্যাপী গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক রেফারেন্স।’
তবে এক যুগ পর এসে সেই পিনাকী উলটো সুরে কথা বলছেন। ৩০ লাখ থেকে শহীদের সংখ্যা তিনি দুই হাজারে নামিয়ে এনেছেন। প্রমাণস্বরূপ এখানেও তিনি ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন। পিনাকীর এমন দ্বিমুখী কাণ্ড নিয়েই মূলত সোশ্যাল মিডিয়া এখন সরব।