ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান আদালতে জামিন চেয়ে কান্নাকাটি করেছেন। পরে আদালত বললেন, আপনাকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের এ মামলায় আসামি মতিউর রহমানকে আদালতে হাজির করা হয়। আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন। আইনজীবীর বক্তব্যের পর মতিউর নিজে কিছু বলার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে তিনি বলেন, আমি কারাগার থেকে দুদককে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। আমি আপনাকে একটি চিঠিটা দিলাম। আপনি দয়া করে আমার চিঠিটা পড়ে যে আদেশ দেবেন, আমি তা মাথা পেতে নেব। আমার পরিবারটা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই কারাগারে। আমার মা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাকে দেখার কেউ নেই। এ বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর বলেন, আমাকে জামিন দিন। জামিন দিলে আমার কাছে যে নথিপত্র আছে তা আদালতে উপস্থাপন করে আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারব। তখন আদালত তাকে বলেন, আপনি দোষী বা নির্দোষ তা এখনই বলা যাবে না। মামলাটি এখন তদন্তাধীন। তাই আপনাকে আরও ধৈর্যধারণ করতে হবে। এরপর আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
গত বছর ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক। এসব নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ২৯ আগস্ট মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি মামলা করে দুদক। আর ১৪ জানুয়ারি তিনি গ্রেফতার হয়ে ১৫ জানুয়ারি থেকে কারাগারে।
কুরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন যুবক মুশফিকুর রহমান ইফাত। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। বলা হয়, তার বাবা এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান। এরপর আলোচনা চলে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এসব নিয়ে। এসব আলোচনার মধ্যে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর পরিবারের বিপুল বিত্তবৈভবের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পরে গত বছরের ৪ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পায় দুদক। পরে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব জব্দ করা হয়। পরে ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।