অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, হয়তো আমরা অনেক জায়গায় ফেল করেছি। তবে সবখানে নয়। আমরা কিছু রূপরেখা রেখে যেতে পারি, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, এই সরকার থেকে হতাশাই পাওয়ার কথা। আমরা কখনো বলিনি যে সবার বাড়িতে গোলাপফুল ফুটবে।
রোববার (১০ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গুলশানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজের সীমাবদ্ধতার কথা অকপটে স্বীকার সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়গুলোতে খুব বেশি পারদর্শী ছিলেন না তিনি। তিনি বলেন,‘আমি এক বছরে চারটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। আশা করি আমি সেখানেই থাকব।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশে যা ঘটেছে তা অকল্পনীয়। এ ধরনের বিপ্লব আগে দেখা যায়নি। লিডারলেস তরুণরা, এমনকি স্কুলের বাচ্চারাও মারা গেছে। প্রায় একমাস তারা রাস্তায় ছিল। তাদের কোনো সাহায্য ছিল না।
তিনি জানান, ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত তিনি টানা ফোনকল পেয়েছেন— কোথাও বাড়িতে আগুন, কোথাও থানায় আগুন। ৪০-৪৫টা থানা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, আমাকে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন পুলিশ অত্যন্ত অনিচ্ছুক ছিল এবং চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছিল। আমি আল্টিমেটাম দিলাম, এই পুলিশ এখনো স্ট্রাকচার্ড হয়নি। যদি পুলিশের গঠন-পদ্ধতি না বদলায়, তাহলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলতেই থাকবে।
এম সাখাওয়াত বলেন, পুলিশি ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হলে ‘টু-স্টেজ রিক্রুটমেন্ট’ চালু করতে হবে। যেভাবে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ঢুকেছে, ভবিষ্যতেও তেমনই হবে। পুরোটা রাজনীতিকীকরণ হয়েছে।
গত অক্টোবরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি তখন একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরে। কোথায় যাবো, বুঝতে পারছিলাম না।এরমধ্যে আবার বেক্সিমকো ইস্যু সামনে আসে। এঘটনায় ৩৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিল।তারা প্রতিদিন অন্য গার্মেন্টসগুলোতে গিয়ে বিঘ্ন ঘটাতো। কিন্তু আমি সেসময় কিছুই করতে পারিনি, শুধু একটি কমিটি গঠন ছাড়া।
ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের বিষয়ে তিনি গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, একটি কোম্পানি ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে, কিন্তু সেই অর্থের কোনো হদিস নেই। তিনি বিশেষভাবে জনতা ব্যাংকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘জনতা ব্যাংক একাই দিয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। বারবার ফাইন্যান্স করেছে, অথচ কোনো কোলেটারাল নেই।
তিনি আরও বলেন, একজন রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পালিয়ে গেছেন।আর তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের মধ্যে আছেন ‘গরিবের গভর্নর’— তিনিও পলাতক।