ষড়যন্ত্র চলছে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে

তারেক রহমান
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ জুলাই ২০২৫, ২১:২৭

"ষড়যন্ত্র চলছে" এমন সতর্কবার্তা দিয়ে নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে চোখ-কান খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি—নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে গুলশানের একটি হোটেলে ছাত্রদলের শহীদ পরিবারের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় তারেক রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সেই কৃষিকে ও কৃষকদের কীভাবে আত্মনির্ভরশীল করা যায়, সে বিষয়ে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন বেকারত্ব। প্রায় চার-পাঁচ কোটি তরুণ এবং প্রতি বছর লাখ লাখ নতুন যুবক যুক্ত হচ্ছে কর্মহীনতার তালিকায়। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার।
নারীর ক্ষমতায়নের দিকটিও তার বক্তব্যে গুরুত্ব পায়। তিনি বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। এই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক হোক বা অর্থনৈতিক, তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।

জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে
তারেক রহমান বলেন, একটি জাতিকে যদি গড়ে তুলতে হয়, তাহলে তাকে ঐক্যবদ্ধ করতেই হবে। আমরা অতীতে দেখেছি—ভাগ করে দিয়ে দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। বিএনপি বিশ্বাস করে, সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, শহীদ পরিবার ও উপস্থিত নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনে নানা পরামর্শ পাওয়া গেছে, তবে অনেক বিষয়ে তারা হয়তো খেয়াল করেননি। আপনারা জুলাই সনদ নিয়ে কথা বলেছেন। এটি আমরা তিন মাস আগেই জমা দিয়েছি। তাই বিচারের দাবিকে আমরা সম্মান জানাই এবং প্রতিশ্রুতি দিই—সুযোগ পেলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

গল্প তৈরির চেষ্টা চলছে
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে তারেক রহমান বলেন, মিডিয়ায় একটি বিষয়কে ঘিরে গল্প তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি, আমাদের এই অভিজ্ঞতা আছে—কে কীভাবে বার্তা তৈরি করে তা আমরা বুঝতে পারি।
তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেকে বিএনপিকে নানা পরামর্শ দেন। কারণ তারা বিশ্বাস করেন, বিএনপি দেশ পরিচালনার যোগ্যতা রাখে।

রিফর্ম মানে প্রশ্ন তোলা নয়
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আলোচনায় বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, বলা হচ্ছে বিএনপি কিছুই মানছে না। কিন্তু আলোচনার টেবিলে বসার অর্থই তো প্রশ্ন তোলা, মতামত দেওয়া। যদি সব মেনে নিতে হতো, তাহলে আলোচনার দরকার কী ছিল?
তিনি বলেন, দায়িত্বহীন কেউ হলে হয়তো সব মেনে নিতো। কিন্তু বিএনপি দায়িত্ববান বলেই তার অভিজ্ঞতা থেকে বলছে, কী করা উচিত আর কী নয়।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপিকে সবাই পরামর্শ দেয়—কারণ তারা মনে করে, বিএনপি দেশ চালাতে পারে। এটা বিশ্বাস করে বলেই কেউ কেউ টকশোতে বসে বলেন, বিএনপির উচিত এটা করা, ওটা করা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল সবকিছু মেনে নিচ্ছে। অথচ বিএনপি প্রশ্ন তুললেই বলা হচ্ছে তারা আলোচনা মানে না। বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার—যা দেশের জন্য ভালো, তা আমরা গ্রহণ করেছি।

কেউ বিদেশি সুরে গান গায়, বিএনপি নয়
স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, যখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তখন কেউ কেউ প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গিয়েছিল। আজ সেই রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে সেই দেশের সুরেই কথা বলেন। অথচ বিএনপি বলছে—বাংলাদেশই আমাদের প্রথম ও শেষ ঠিকানা।

প্রতিটি হত্যার বিচার করবো
বক্তব্যের শেষদিকে শহীদদের স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা শহীদ হয়েছেন, গত ১৫ বছরে যারা প্রাণ দিয়েছেন—প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা করবো। দফার মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রের পুনর্গঠন পরিকল্পনা দিয়েছি। জনগণের সমর্থন পেলে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।
যেসব শহীদ পরিবারের খোঁজখবর দলের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তারেক রহমান।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ইসলাম আলমগীর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।