বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র প্রতিবাদ

জাতিসংঘের কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০১ জুলাই ২০২৫, ০০:০৪

জাতিসংঘের কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী দলের নেতারা। তারা বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপন অনুমোদন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল এবং এটি জাতীয় স্বার্থ ও ইসলামী মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত। সোমবার বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘের এ ধরনের পদক্ষেপ এবং সরকারের পক্ষ থেকে এর অনুমোদন দেশের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বকীয়তা ও ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য গভীর উদ্বেগজনক। তথাকথিত ‘মানবাধিকার কার্যালয়’ দেশে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে অযাচিত হস্তক্ষেপের পথ সুগম করবে।
নেতৃদ্বয় বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর মুসলিম দেশগুলোর ওপর পশ্চিমা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মানবাধিকারের নামে ইসলামী শরিয়াহ, পারিবারিক আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ। বাংলাদেশে এই কার্যালয় স্থাপন সেই চক্রান্তকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।
তারা আরও বলেন, বিগত একযুগ ধরে দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। গুম, খুন, ভোটাধিকার হরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন এবং শাপলা চত্বরে সংঘটিত নির্মম গণহত্যার মতো ঘটনায় জাতিসংঘ নির্বিকার থেকেছে। অথচ এখন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার অফিস স্থাপন করে নতুন করে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের একটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত এবং তা সরকারদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন গভীর উদ্বেগজনক ও আশঙ্কার বিষয়।
তারা বলেন, এমন সময়ে যখন দেশের বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তখন একটি সংবেদনশীল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া জাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার।

ইসলামী ঐক্যজোট
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষার নামে জাতিসংঘ আজ পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। ইহুদি ইসরাইল যুগের পর যুগ ধরে ফিলিস্তিন ও গাজায় লাখ লাখ মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে, অথচ জাতিসংঘ শুধু নিন্দা প্রস্তাব দিয়েই দায় সেরেছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে অফিস খুলে মানবাধিকার নয়, বরং পশ্চিমা বেলেল্লাপনা, ইসলামবিরোধী অপতৎপরতা চালাতে চায়। তাই ইসলামী মূল্যবোধ এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার অফিসের অনুমতি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।