ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে 'নিখোঁজ' এইচএসসি পরীক্ষার্থী কিশোরীকে সাভার থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব।
উদ্ধার শিক্ষার্থীর বরাতে র্যাব ও পরিবার বলছে, রোববার পরীক্ষা দিতে মিরপুরের বাঙলা কলেজে যেতে বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর এক নারী তাকে 'অজ্ঞান করে' সাভারে নিয়ে গিয়েছিল।
তবে কারা কেন তাকে ‘অপহরণ’ করেছিল, কীভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হল, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রোববার পরীক্ষা শেষে নির্ধারিত সময়ে বাসায় না ফেরায় সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেও তাকে পাননি স্বজনরা। পরে পরিবার ভাটারা থানায় জিডি করে।
পরে তদন্তে নেমে রোববার রাতে সাভার এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করার কথা বলা হয় র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন মেয়েটি। তার পরীক্ষা কেন্দ্র মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব বলেছে, পরীক্ষার জন্য রোববার সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হন ওই শিক্ষার্থী। দুপুর ১টার মধ্যে তার পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজ নিতে কেন্দ্রে যান। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারেন, তিনি কেন্দ্রেই যাননি।
“উদ্ধার শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর একজন মহিলা তার সাথে কথা বলতে আসে, কথা বলার এক পর্যায়ে মহিলা চেতনানাকশ কিছু দ্রব্য তার নাকের সামনে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এর পরে সে আর কিছু মনে করতে পারেনি।
“জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে একটি রুমের ভিতরে আবিষ্কার করে। ভিকটিম অজ্ঞাত বাসায় বেশ কিছুসময় অতিবাহিত হওয়ার পরে সুকৌশলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে র্যাবের টহল দল ভিকটিমের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে হেফাজতে নেয়।”
র্যাব-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এন রায় নিয়তি বলেন, "মেয়েটিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় আমরা বেশি কথা বলতে পারিনি।"
তবে শিক্ষার্থীর বাবা যে বিবরণ দিয়েছেন, তা র্যাবের ভাষ্য থেকে কিছুটা ভিন্ন।
মেয়ের বরাতে তিনি বলেন, "সে বাসে করে বাঙলা কলেজে যাচ্ছিল, জানালার পাশে বসা ছিল। বাসে একজন মহিলা তার পাশে এসে বসে, বাসটি মিরপুর এলাকায় গেছে পর্যন্ত তার মনে আছে। তারপর কী হয়েছে আর বলতে পারছে না।"
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জ্ঞান ফিরলে ওই শিক্ষার্থী নিজেকে ‘একটি ভবনের ছাদে আবিষ্কার’ করেন জানিয়ে তার বাবা বলেন, "ভবনটি টিনে ঘেরা ছিল, এ থেকে বোঝা যায় সেটি আন্ডার কনস্ট্রাকশন। সে সেখানে একজন নারী, একজন বয়স্ক পুরুষ এবং তিনজন বিদেশিকে দেখতে পায়। তাদের মধ্যে ইংরেজিতে আলাপ হচ্ছিল এবং তারা নিজেদের মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে রাগারাগি করছিল।
"তখন বয়স্ক পুরুষটি বলছিল, মিডিয়ায় নিউজ হয়েছে, ছবিসহ প্রচার করছে, এই মেয়েকে রাখা যাবে না। তখন তার ড্রেস চেঞ্জ করে চুল কেটে বের করে দিতে বলে, যাতে তাকে চেনা না যায়। এরপর তারা জোর করে তার ড্রেস চেঞ্জ করায়, তবে চুলগুলো কাটেনি।"
মেয়েটির বাবা আরও বলেন, "তখন ওই বয়স্ক লোকটি তার হাতে চারশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে, 'মা তুমি চলে যাও'। তখন আমার মেয়ে বলে ‘আমি কই যাব?’ ওই লোক জিজ্ঞাসা করে ‘বাসা কোথায়?’ বাসার ঠিকানা বলার পর সে বলে ‘সাভার যাও’। তখন সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে, তার ধারণা ১০-১২ তলার উপরে তাকে রাখা হয়েছিল।
"নিচে নেমে একটি অটোরিকশা পায়, রিকশা ভাড়া ছিল ৬০ টাকা। পরে সাভার বাসস্ট্যান্ড এসে রিকশা থেকে নেমে ১০০ টাকা দিয়ে দেয়। তখন তাকে দেখে স্থানীয় এক লোক কই যাবে, কোথা থেকে এসেছে জিজ্ঞাসা করে। সে তখন বলে আব্বাকে একটা ফোন দেন। পরে ওই লোকের ফোনে আমরা তার সাথে কথা বলি, তখন র্যাবসহ সেখানে গিয়ে তাকে আমরা পাই।"
"বর্তমানে সে অনেক ক্লান্ত, বাসায় আছে। ঘুমের জন্য চোখ খুলতে পারছে না। কাল পরীক্ষা দিতে পারবে কি না জানি না।"